ধূমপান ছাড়বেন কিভাবে-ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন

ধূমপান ছাড়বেন কিভাবে-ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন

ধূমপান বলতে তামাক পণ্য, বিশেষ করে সিগারেট, বিড়ি, বা সিগার, জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করাকে বোঝায়। তামাকের ধোঁয়ায় নিকোটিন সহ নানা ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। দীর্ঘমেয়াদে ধূমপান বিভিন্ন রোগ, যেমন ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।

এছাড়া, ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর জন্য নয়, ধূমপানের ধোঁয়ায় যে পরিবেশ দূষিত হয়, তাতে আশেপাশের মানুষের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হতে পারে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন
শব্দগত ব্যাখ্যা
ধূমপান শব্দটি দুটি অংশে বিভক্ত:
  • ধূম: এটি সংস্কৃত শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ধোঁয়া।
  • পান: এটি পান করা বা গ্রহণ করার প্রতীক।
ধূমপান শব্দগতভাবে "ধোঁয়া গ্রহণ করা" বা "ধোঁয়া পান করা" বোঝায়।

সিগারেটে কি থাকে?

সিগারেটে প্রধানত তামাক থাকে, যা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় ৭,০০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায়, যার মধ্যে অনেকগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। প্রধান উপাদানগুলো হল:নিকোটিন: এটি সিগারেটের আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান। এটি দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে আসক্তির অনুভূতি তৈরি করে।
  • টার (Tar): এটি সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা একধরনের আঠালো পদার্থ, যা ফুসফুসে জমা হয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কার্বন মনোক্সাইড: এটি একটি বিষাক্ত গ্যাস, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
  • অ্যামোনিয়া: এটি তামাকের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।
  • ফর্মালডিহাইড: এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং শরীরের টিস্যুতে ক্ষতি করে।
  • বেনজিন: এটি একটি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম রাসায়নিক পদার্থ।
  • অ্যাসিটোন: এটি নখের পলিশ রিমুভারে পাওয়া যায় এবং এটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
  • আরসেনিক: এটি একটি বিষাক্ত রাসায়নিক, যা সাধারণত কীটনাশকে ব্যবহৃত হয়।
এই রাসায়নিকগুলোর কারণে সিগারেট ধূমপান শ্বাসযন্ত্র, হৃদযন্ত্র, এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন ?

সিগারেটে প্রধানত তামাক থাকে, যা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রায় ৭,০০০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া যায়, যার মধ্যে অনেকগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। প্রধান উপাদানগুলো হল:নিকোটিন: এটি সিগারেটের আসক্তি সৃষ্টিকারী উপাদান। এটি দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে আসক্তির অনুভূতি তৈরি করে।
  • টার (Tar): এটি সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে থাকা একধরনের আঠালো পদার্থ, যা ফুসফুসে জমা হয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কার্বন মনোক্সাইড: এটি একটি বিষাক্ত গ্যাস, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
  • অ্যামোনিয়া: এটি তামাকের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।
  • ফর্মালডিহাইড: এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এবং শরীরের টিস্যুতে ক্ষতি করে।
  • বেনজিন: এটি একটি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম রাসায়নিক পদার্থ।
  • অ্যাসিটোন: এটি নখের পলিশ রিমুভারে পাওয়া যায় এবং এটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে।
  • আরসেনিক: এটি একটি বিষাক্ত রাসায়নিক, যা সাধারণত কীটনাশকে ব্যবহৃত হয়।
এই রাসায়নিকগুলোর কারণে সিগারেট ধূমপান শ্বাসযন্ত্র, হৃদযন্ত্র, এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

ধূমপান ছাড়বেন কিভাবে?

ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া কঠিন হতে পারে, তবে পরিকল্পনা, ধৈর্য, এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি সম্ভব। ধূমপান ছাড়ার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় হলো:

১. ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াপ্রথম পদক্ষেপ হলো ধূমপান ছাড়ার জন্য মনের মধ্যে শক্ত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া। আপনার ধূমপান ছাড়ার কারণগুলো পরিষ্কারভাবে চিন্তা করুন, যেমন স্বাস্থ্য, অর্থ সঞ্চয়, পরিবার বা সন্তানের মঙ্গলের কথা।

২. তারিখ নির্ধারণধূমপান ছাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করুন এবং সেটি মেনে চলার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে প্রস্তুতি নিতে এবং ধূমপানের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবে।

৩. ধীরে ধীরে কমানোযদি একবারে ধূমপান ছাড়তে কঠিন মনে হয়, তবে ধীরে ধীরে সিগারেটের সংখ্যা কমানো শুরু করুন। প্রতিদিন একটি বা দুটি কমিয়ে আনতে পারেন।

৪. নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT)নিকোটিনের অভাবজনিত সমস্যা কমাতে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন, যেমন নিকোটিন গাম, প্যাচ, লজেন্স, বা ইনহেলার। এগুলো নিকোটিনের আসক্তি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনে।

৫. মেডিসিনকিছু ওষুধ, যেমন বারপ্রোপিয়ন (Zyban) বা ভারেনিক্লিন (Chantix), ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে এই ওষুধগুলো নেওয়া যেতে পারে।

৬. পরিবর্তিত রুটিন এবং অভ্যাসধূমপানের অভ্যাস ভাঙতে আপনার দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন করুন। যেমন, যদি সকালে ধূমপান করার অভ্যাস থাকে, তবে তা বাদ দিয়ে হাঁটা বা ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।

৭. সমর্থন এবং কাউন্সেলিংধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় পরিবার, বন্ধু, বা ধূমপান ছাড়ার জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং সেবা সহায়তা করতে পারে। গ্রুপ থেরাপি বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শও কাজে আসতে পারে।

৮. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টস্ট্রেস বা টেনশন কমানোর জন্য ধূমপানের পরিবর্তে অন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন, বা শখের কোনো কাজ করা।

৯. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনধূমপান ছাড়ার পর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, প্রচুর পানি পান করা, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীর ও মনের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

১০. ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখাধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় পুনরায় ধূমপান করতে ইচ্ছা হতে পারে, কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ধৈর্যশীল ও ইতিবাচক রাখতে হবে। যদি পুনরায় ধূমপান করেন, তবে হাল না ছেড়ে পুনরায় চেষ্টা করুন।

১১. পুরস্কৃত করাধূমপান ছাড়ার প্রতিটি সাফল্য উদযাপন করুন। নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দিন যা আপনাকে উৎসাহিত করবে।

ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন হতে পারে, তবে সচেতন প্রচেষ্টা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

সিগারেট খাওয়া কি হারাম?

সিগারেট খাওয়া বা ধূমপান ইসলামে হারাম কিনা, তা নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে অনেক ইসলামি পণ্ডিত এবং ফতোয়া বোর্ড সিগারেট খাওয়াকে হারাম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

১. স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরইসলামে শরীরের যত্ন নেওয়া এবং ক্ষতিকারক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি করে, তাই অনেক পণ্ডিত একে হারাম বা অন্তত মাকরুহ (অপছন্দনীয়) বলে থাকেন।

২. অর্থের অপচয়সিগারেট খাওয়া একটি ব্যয়বহুল অভ্যাস এবং এর মাধ্যমে অর্থের অপচয় হয়। ইসলামে অপচয় (ইস্রাফ) নিষিদ্ধ, তাই সিগারেটে অর্থ ব্যয় করাকে হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৩. আত্মা ও শরীরের জন্য ক্ষতিকরইসলামে যে কোনো কিছু যা আত্মা ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিগারেট ধূমপান ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করে, যা শরীরের ক্ষতির পাশাপাশি আত্মার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে।

৪. অন্যের ক্ষতিধূমপানের ধোঁয়ায় শুধু ধূমপায়ী নয়, আশেপাশের লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসলামে অন্যের ক্ষতি করা বা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলা নিষিদ্ধ। তাই এই দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক পণ্ডিত সিগারেট খাওয়াকে হারাম হিসেবে গণ্য করেন।

বিভিন্ন ফতোয়াঅনেক ইসলামিক ফতোয়া বোর্ড, যেমন সৌদি আরবের প্রধান মুফতিরা, মিশরের আল-আজহার, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা, সিগারেট খাওয়াকে হারাম বলে ঘোষণা করেছে। তারা তামাকের আসক্তি এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোর উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

তবে কিছু পণ্ডিত সিগারেট খাওয়াকে সরাসরি হারাম না বলে মাকরুহ (অপছন্দনীয়) বলে থাকেন, যা ইসলামে নিরুৎসাহিত, কিন্তু সরাসরি নিষিদ্ধ নয়।
সারসংক্ষেপ:

বর্তমান ইসলামি চিন্তাবিদদের অনেকেই সিগারেট খাওয়াকে হারাম হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ এটি শরীরের ক্ষতি করে, অর্থের অপচয় ঘটায় এবং আশেপাশের মানুষদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সিগারেট খেলে কি নামাজ হবে?

সিগারেট খেলে নামাজ হবে কিনা, এটি নিয়ে ইসলামে সরাসরি কোনো বিধান নেই। তবে এই বিষয়ে কিছু বিষয় বিবেচনা করা যায়:

১. পবিত্রতাইসলামে নামাজের জন্য শরীর, পোশাক, এবং স্থান পবিত্র থাকা আবশ্যক। সিগারেট খাওয়ার ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়, যা নামাজের সময় অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) মসজিদে যাওয়ার আগে কোনো ধরনের দুর্গন্ধযুক্ত খাবার, যেমন কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন খেতে নিষেধ করেছেন, কারণ তা অন্যান্য নামাজিদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। সিগারেটের ক্ষেত্রে একই নীতি প্রযোজ্য হতে পারে।

২. নামাজের বৈধতাসিগারেট খাওয়া নিজেই নামাজের বৈধতাকে বাতিল করে না। অর্থাৎ, সিগারেট খাওয়ার পর নামাজ পড়া বৈধ, তবে নামাজের আগে ভালোভাবে ওজু বা মুখ পরিষ্কার করা উচিত যাতে ধোঁয়ার গন্ধ দূর হয় এবং নামাজের পরিবেশ পবিত্র থাকে।

৩. আধ্যাত্মিক দিকনামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এবং নিজের মন, দেহ ও আত্মা শুদ্ধ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। সিগারেট খাওয়ার মতো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অভ্যাস পালন করা, যা শরীরের ক্ষতি করে, ইসলামের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপ্রত্যাশিত।

৪. সুন্নাহ এবং আখলাকইসলামের সুন্নাহ এবং আখলাক অনুযায়ী, মন্দ কাজ বা স্বাস্থ্যহানিকর অভ্যাস থেকে বিরত থাকা উচিত। যদিও সিগারেট খাওয়ার কারণে নামাজ সরাসরি বাতিল হয় না, তবে সিগারেটের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে থাকা ইসলামের শিক্ষা অনুসারে ভালো অভ্যাস হবে।

উপসংহার:

সিগারেট খেলে নামাজ বাতিল হবে না। তবে নামাজের আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত যাতে সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ না থাকে এবং নামাজের পরিবেশ পবিত্র থাকে। তবে, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এবং ইসলামের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি খারাপ অভ্যাস, যা বর্জন করা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url