রোজা রেখেও সতেজ থাকার উপায়

রোজা রেখেও সতেজ থাকার উপায়

রমজান মাস এলে দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন আসে। সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত পানি পান না করার কারণে ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা থাকে। স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য রমজান মাস তাই কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।

রোজা রাখাটা ঠিক সহজ কাজ না। তবে চেষ্টা করলে রোজা রেখেও নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা যেমন সম্ভব তেমন প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাহিল হওয়ার সমস্যাও এড়ানো সম্ভব। আসুন দেখে নেই বিশেষজ্ঞরা কি পরামর্শ দিচ্ছেন এ ব্যাপারে।

রোজা রাখলে দেহের উপকারই হয়

অধিকাংশ খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ জানান রোজা রাখলে আপনার দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। তারা বলেন, সারাবছরই পরিপাকতন্ত্র ব্যস্ত থাকে। কিন্তু রোজার সময় আমাদের পরিপাকতন্ত্র কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ পায়। ফলে দেহের ভেতর কিছু মৃত কোষ দূর হতে শুরু করে।

রোজা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহজনিত সমস্যা এবং স্ট্রেস কমাতেও সহায়তা করে। তবে সারাদিন কিছু না খাওয়ার কারণে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে। তাই সেহরি ও ইফতারের সময় সঠিক খাবার নির্বাচন ও পুষ্টির দিকে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করুন

রমজানের সময় খাওয়া দাওয়ার সময় তাড়াহুড়োটাই যেন স্বাভাবিক। সেহরির সময় চলে যাবে বলে অনেকেই দ্রুত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এমনটা করা উচিত নয়। তাছাড়া ইফতারের আগ মুহূর্তে অনেকে প্রচণ্ড ক্ষুধায় বেশি খেয়ে ফেলেন। তাতে আখেরে কি হয়? নড়াচড়ার একটুও জো থাকে না।

খাওয়াদাওয়া করুন ধীরে সুস্থে। আস্তে আস্তে চিবিয়ে খান। স্বাভাবিকভাবে আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুধা মেটার সিগন্যাল পৌঁছুতে ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। তাই আপনি অসাবধানে বেশি খেয়ে ফেলতেও পারেন। তাই আস্তে-ধীরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।

সেহরি বাদ দেবেন না

অনেকেরই ধারণা যে সেহরি না খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে ইফতার, রাতের খাবার এবং তারপর সেহরি না খেলে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়। আগেই বলেছি, আস্তে আস্তে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি এই তিনটি সময়েই খেতে পারবেন, যা স্বাস্থ্যকর।

খাদ্যতালিকায় যা রাখবেন

রোজার সময় খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে। সাধারণত রোজার সময়ে উচ্চ প্রোটিন ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত, কারণ এ ধরনের খাবার পরিপাক হতে সময় নেয়, ফলে দ্রুত ক্ষুধা লাগে না। অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, বিশেষ করে সাদা চিনি এড়িয়ে চলা ভালো। অনেকেই ইফতারের সময় ঘরোয়া মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে ফাইবারজাতীয় খাবার খাওয়ার সময় কিছুটা সতর্ক থাকতেই হবে। অনেক সময় ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আপনার হরমোনে পরিবর্তন আনে। এতে শরীরে মেদ জমতে শুরু করে। তাই প্রোটিন এবং ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারে মনোযোগ দিন।

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখবেন যেভাবে

সহজ হিসেব- আগে জেনে নিন প্রতিদিন আপনার শরীরে কতটুকু পানি লাগে। তারপর সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের আগে ও পরে ওই পরিমাণ পানি খেয়ে নিন। এই সময় একটানা পানি খাওয়ায় সমস্যা হলে লেবু চিপে মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও আরো কিছু পরামর্শ অনুসরণ করতে পারেন-
  • সোডিয়ামের পরিপূর্ণ কিংবা ভাজাপোড়া খাওয়া বাদ দিন। সেক্ষেত্রে পোল্ট্রির মাংসও এড়িয়ে চলুন।
  • ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল খাবার খান। বিশেষত ইফতারের পর ডাব খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
  • পানি এক নিমিষেই খেয়ে ফেলবেন না। বরং সময় নিয়ে খান।
  • পানি আছে এমন ফল বেশি বেশি খান। যেমন এই গরমে তরমুজ, শসা, বেল, ইত্যাদি।

ঘুম এড়াবেন না

রোজার সময় রাতে একটানা ঘুমটা পুরোপুরি সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সারাদিনের ব্যস্ততায় পাওয়ার ন্যাপ দেয়ার অভ্যাস করুন। এতে একেবারে না ঘুমানোর অস্বস্তি দূর হবে।

ব্যায়ামের অভ্যাসে রদবদল

রমজানে নতুন কোনো এক্সারসাইজ রুটিন শুরু করা ঠিক নয়। নিজের ফিটনেস লেভেল অনুযায়ী কী ধরনের ব্যায়াম করা উচিত, তা আগে বুঝে নিতে হবে। অনেকে সেহরির আগে ব্যায়াম করেন, যা ঠিক নয়, কারণ এতে সারাদিন শরীর দুর্বল লাগতে পারে। এর পরিবর্তে, ইফতারের পর ব্যায়াম করা ভালো। ব্যায়ামের আগে ফাইবার বা শর্করাজাতীয় খাবার খেলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ডায়াবেটিকদের জন্য পরামর্শ

মহুয়া বলেন, "সরাসরি মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন চিনি, গুড়, মধু ইত্যাদি মেশানো ছাড়া ডায়াবেটিকরা সব ধরনের খাবারই খেতে পারেন। সেহরিতে দুধ-ভাত-কলা বা দুধ-ভাত-আম খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কখনোই তিনটি কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়, এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই শুধু দুধ-ভাত অথবা শুধু ভাত-কলা বা ভাত-আম এভাবে খেতে পারেন।

যারা মুখে খাওয়ার ওষুধ ও ইনসুলিন নেন, তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হল, সকালের ওষুধ বা ইনসুলিন’য়ের ‘ডোজ’টা ইফতারে নেবেন আর রাতের ডোজের ‘হাফ ডোজ’ সেহরিতে নেবেন।

অনেকের তিনবেলা এমনকি চারবেলাও ইনসুলিন নিতে হয়। তাই ‘ব্লাডসুগার টেস্ট’ করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের ‘ডোজ’ ঠিক করে নেওয়াই উচিত হবে।

ডায়েবেটিকদের সেহরির পরে না ঘুমিয়ে দুপুরের আগ পর্যন্ত দিনের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিতে পারলে ভালো। দুপুরের পরে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিতে হবে। কারণ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একে প্রতিরোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল দুপুরের পর থেকে কায়িক পরিশ্রম কম করা।

তবে বাড়ির নারী সদস্যরা এ সময়ে ইফতার তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। যদি তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সকালের দিকেই কিছু কাজ গুছিয়ে রাখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url