বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করা হল
বেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বেল Rutaceae গোত্রের মাঝারি আকারের বৃক্ষ Aegle marmelos-এর সাদাটে রঙ্গের গোলাকার ফল। গাছের উচ্চতা হয় ১৫-৩০ ফুট। গাছের পুরু হয়, তুলনা মূলক ভাবে নরম, ধূসর বর্ণের। পাতা যৌগিক ও তিনটি করে থাকে, উপপত্র নেই। পাতার গোড়ার দিকে কাঁটা থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাতা ঝরে যায় ও বৈশাখ মাসে নতুন পাতা ও ফুল আসে। এ সময় গাছে পাকা বেল থাকে।
ফুল লালচে, ফল বেশ বড়, গোলাকার, ব্যাস হয় ৫-১৬ সেমি, ত্বক আনেক শক্ত হায়। ফলের খোল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হয় হলুদ রঙের হায়। ফলের ভিতরে থাকে অসংখ্য ছোট ছোট বীজ। পাকা ফলের শাঁস ও শরবত সুস্বাদু।
বাংলাদেশের সর্বত্র বেল গাছ জন্মালে ও রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলায় বেল গাছ বেশি দেখা যায়। রাজশাহী ও গাজীপুরে আনেক বড় আকারের ফলবিশিষ্ট গাছ জন্মায়। বেলের শাঁস শরবত, মোরববা ও আচার তৈরিতে ব্যবহার হয়। বেল সু খাদ্য ও কোষ্ঠ পরিষ্কারক, পেটের পীড়ায় বিশেষ করে আমাশয় ও উদরাময় রোগের জন্য উপকারী। বেলের পাতা ও গাছের ছাল কবিরাজি ঔষধ হিসেবে ব্যবহূত হয়। বেল গাছের কাঠ কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রের হাতল তৈরি, খোদাই কাজ ইত্যাদিতে ব্যবহূত হয়।
কদবেল (Elephant apple) নামে পরিচিত আরেকটি ছোট আকারের বেল বাংলাদেশে বেশ সমাদৃত। এটি Feronia limonia গাছের টেনিস বল আকারের সাদাটে, গোলাকার ফল। কদবেল গাছও মাঝারি আকারের, কাঁটাযুক্ত, পাতা ছোট, ফুল লালচে রঙের। পাকলে ফল খেতে খুব সুস্বাদু, কিছুটা টক। কদবেলের ভর্তা, আচার ও চাটনি খুবই উপাদেয়। শাঁস সুগন্ধযুক্ত, ফলে প্রচুর বীজ থাকে। বাংলাদেশে সর্বত্রই কম বেশি কদবেল গাছ জন্মে।
বেল কখন খেতে হয়?
বেল খেতে হয় প্রতিদিনের সকালে, সকালের নাস্তার সময়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, যেটা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। এটি সকালের শুরুতে দেয়া উচিত, কারণ এটি দিনের প্রথম খাবার হিসেবে মানুষের ত্রাণ এবং শক্তি প্রদান করে। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও দেশে বেল খেতে সময় ভিন্নভাবে হতে পারে, কিন্তু সাধারণত এটি সকালের জন্য ধরা হয়।
নিয়মিত বেল খেলে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি বেড়ে যায়। বেল খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি শরীরের ইমিউনিটি বুস্ট করার পাশাপাশি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। এ ছাড়া ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, যক্ষ্মা, পুষ্টিতেও ভালো কাজে আসে বেল। তাই গরমের এই সময় সকালে নিয়মিত খেতে পারেন বেল অথবা বেলের শরবত।
বেলের শরবতের উপকারিতা
* গ বেলে রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি ও প্রচুর খনিজের জোগান।
* বেলের ভিটামিন-সি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগগুলো থেকে মুক্তি মেলে।
* বেলের ভেতরের অংশটি পিচ্ছিল ও প্রচুর শাঁস থাকায় এটি পাকস্থলীর জন্য উপকারী। তাই এটি খাবার সঠিকভাবে হজম হতে সাহায্য করে।
* বেলের ভিটামিন চোখের পুষ্টি জোগায় ও চোখের সুরক্ষায় সাহায্য করে থাকে।
* মলদ্বারের রোগ পাইলস, অ্যানাল ফিস্টুলা, হেমোরয়েড রোগীরা নিয়মিত বেলের শরবত খেলে ওষুধের মতো কাজ করে।
* বেলে ন্যাচারাল ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই এটি পেটে গ্যাস-এসিডিটি সৃষ্টি হতে দেয় না এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।
* এই গরমে প্রতিদিন বেলের শরবত পান করলে সরিলের ক্লান্তি দূর হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিক পরিশ্রমের পর এক গ্লাস বেলের শরবত সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে তোরতাজা করে তোলে।
* ব্রণ দূর করতেও বেলের শরবত দারুণ উপকারী।
* পেটের নানা অসুখে বেলের শরবত দারুণ উপকারী। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয়, ডায়রিয়া রোগে কাঁচা বেল খেলে উপকার পাওয়া যারমে অন্যান্য ফলের চেয়ে বেলের স্বাস্থ্যগুণ একটু বেশিই বলা যায়। বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।য়।
বেল খাওয়ার অপকারিতা
বেল খাওয়ার অপকারিতা নিয়ে একেবারেই প্রমাণ অনুভব করা হয় না, তবে এটি কিছু মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সংযোগিত হতে পারে। কিছু মানুষের জন্য বেল খাওয়া কিছু আওতায় অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে, এমন নীচ রকম কারণে:
প্রজনন সমস্যা: বেল খাওয়া স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে একটি হতে পারে, যেমন গর্ভধারণের সমস্যা বা স্ত্রীর মাসিক বা পিরিয়ডের সমস্যা।
মনোবিকার প্রভাব: বেল খাওয়া ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ও স্বার্থের দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি চিন্তা, চিন্তা, অত্যাচার ইত্যাদির জন্য কারণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি: বেল খাওয়ার ব্যবস্থা যদি নিয়মিত না হয় এবং খাবারের মধ্যে সহ্যশীলতা না রয়ে থাকে, তাহলে এটি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে।
পাচন সমস্যা: বেল খাওয়ার পরিবেশনা বা খাবারের নির্মিতির পদ্ধতি অশুদ্ধ হলে, এটি পাচন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিক্রিয়া: কিছু মানুষের শরীর বেল খাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখায়, যেমন ত্বকের ব্যথা, গ্যাস, পেট ব্যাথা ইত্যাদি।
এই সমস্যা গুলির কমের জন্য নিয়মিত ও সঠিক খাবার আদান-প্রদান ও উপযুক্ত পুষ্টি মানের মেয়াদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, যদি কেউ বেল খাওয়ার সময় কোনও সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে তা সাক্ষাতকার করার জন্য চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা
বেল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। সেই সঙ্গে এতে আছে নানান প্রকার ঔষধি গুণ, যা আমাদের উপকারী হিসেবে পাকা জায়গা করে নিয়েছে এ ফল।
বিভিন্ন উপকারী গুণের পাশাপাশি গরমে ঠান্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই আপনাকে প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তাই গরমের এই সময়টায় সকালের শুরুটা বেলের শরবতকে সঙ্গী করে নিতে পারেন।দেহের অনেক উপকার করে থাকে। প্রাচীন সময় থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শরীরের জন্য
নিয়মিত বেলের শরবত খেলে রয়েছে হাজারো উপকারিতা।
১। কোষ্ঠকাঠিন্য: নিয়মিত বেল খেলে এর ল্যাকোটিভগুণ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও মুখের ব্রণ দূর হয় এবং ত্বক ভালো থাকে। টানা ৩ মাস যদি আপনি নিয়মিত বেল খান, তাহলে আপনি সহজেই মুক্তি পেতে পারেন এই সমস্যা থেকে।
২। আলসারের ওষুধ: আলসারের ওষুধ হিসেবে খেতে পারেন বেল। পাকা বেলের শাঁসে সেই ফাইবার আছে, যা আলসার উপশমে খুবই কার্যকরী। এ জন্য সপ্তাহে তিন দিন খান বেলের শরবত।
৩। ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে বেল। পাকা বেলে আছে মেথানল নামের একটি উপাদান, যা ব্লাড সুগার কমাতে অনবদ্য কাজ করে। তবে শরবত করে নয়, বেল খেতে হবে এমনিই।
৪। আর্থ্রাইটিস: শরীরে হাড়ে কিংবা মাংসে ব্যাথা ছাড়া এখন খুব কম মানুষই আছেন। আর্থ্রাইটিসের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও বেলকে সঙ্গী করে নিতে পারেন।
৫। এনার্জি: পুষ্টিবিদরা বলছেন, ফাইবারে ভরপুর বেল হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এনার্জি বাড়াতে বেলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ গ্রাম বেল ১৪০ ক্যালরি এনার্জি দেয়। পাচনক্রিয়াকেও শক্তিশালী করে তোলে এই বেল।
৬। ব্লাড প্রেশার: ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়ার কারণে চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে এ সময় বেল খেলে দূর হবে এই সমস্যা? আনেক চিকিৎসকরা বলছেন, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেলের তুলনা মেলা ভার।
৭। ক্যানসার: বেলে রয়েছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। নিয়মিত বেল খেলে শরীর ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি বেড়ে যায়।
বেল খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি শরীরের ইমিউনিটি বুস্ট করার পাশাপাশি শরীরকে শীতল রাখে। এ ছাড়া ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, যক্ষ্মা, অপুষ্টিতেও ভালো কাজে আসে এই বেল। তাই গরমের এই সময় সকালে নিয়মিত খেতে পারেন বেল অথবা বেলের শরবত।
কাঁচা বেলের উপকারিতা
এটি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঠান্ডা প্রবণতা, পিঠের অস্বস্তি, অনিদ্রা এবং চোখের প্রদাহের মতো অবস্থার জন্য ভাল কাজ করে।
ডায়রিয়া নিরাময় : ডায়রিয়ার সেরা ওষুধ। অনেকদিন ধরে এই সমস্যা থাকলে বেল খান। বেল টুকরো টুকরো করে রোদে শুকানোর জন্য রেখে দিন।
বেল পাতা খাওয়ার উপকারিতা
বেলপাতায় এমন অনেক গুণ রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ রাখে। একে প্রতিষেধক হিসেবে ধরা হয়। বেলপাতার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে বেলপাতা খেলে দেহের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত এই পাতা খেলে উপকার পাবেন। এছাড়া পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক সমস্যা থেকেও দূরে রাখে এটি। আয়ুর্বেদও এর বৈশিষ্ট্যগুলিও বর্ণনা করে যে বেলপাতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে বেলাপাতায় রয়েছে প্যান্টিনস এবং মারমেলোসিন নামক উপাদান। বিজ্ঞানীদের মতে, এই উপাদানগুলো শরীরে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে ঃঘামের সমস্যায় ভুগলে ভরসা রাখুন বেলপাতায়। নিয়মিত এই পাতার রস খেলে ঘাম থেকে সৃষ্ট দুর্গন্ধ দূর হয়।
পেটজনিত রোগ থেকে মুক্তি বেলপাতার রস পান করলে পেট সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপকারি উপাদান।
বাড়তি প্রোটিন: বেল পাতা প্রোটিনের ভালো উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রোটিন মাংস, মাছ, ডেয়ারি পণ্য ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়, এবং এটি শরীরের শিক্ষা, পুষ্টিকর্ম এবং রক্ত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস: বেল পাতা ভিটামিন A, ভিটামিন C, ক্যালসিয়াম, আয়ডিন, ফসফরাস, আয়রন, আর ফোলিক এসিডের উৎস হিসাবে পরিচিত। এই উৎসগুলি শরীরের প্রতিটি অংশের সুস্থ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাচনে সাহায্য: বেল পাতা ফাইবারের ভালো উৎস হিসাবে পরিচিত, যা পাচনতন্ত্রকে সাহায্য করে এবং পেটে মসলা উৎপন্ন করে। এটি একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসাবে পরিচিত এবং প্রতিদিনের পাচনের জন্য ভালো।
পাচনাশক্তির প্রতিস্থাপন: বেল পাতা অত্যন্ত কম ক্যালরি ও অতি বেশি আয়ডিন বিস্তৃত করে, যা স্বাস্থ্যকর ও শক্তিশালী পাচনাশক্তির প্রতিস্থাপনে সাহায্য করে।
বেলের মতোই এর পাতা শরীরকে শান্ত করে। খালি পেটে টানা তিন দিন বেলপাতার রস খেলে বার্ধক্য রোধ হয়।
কীভাবে খাবেন?
তাজা বেলপাতা বেটে আথবা ব্লেন্ড করে এর রস বের করে নিন। এই রসে কয়েক ফোঁটা তুলসির রস এবং আদার রস মেশান। এবার এই মিশ্রণ একটি পাত্রে নিন ফুটিয়ে পান করুন।
আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url