জ্বর হলে করণীয় কি
শিশু ও বড়দের জ্বর হলে করণীয় কি
জ্বর হলে করণীয়
জ্বর কোনো রোগ নয়, বরং অন্য রোগের লক্ষণ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। জীবাণুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য শরীরে প্রকৃতিপ্রদত্ত এটি একটি প্রতিরোধক দেয়াল। জ্বর হলে অনেক নিয়ম মানা হয়, যা পুরোপুরি ঠিক নয়।
গোসল ও গা মুছে দেওয়া
অনেকের ধারণা, জ্বর হলে গোসল করা যাবে না। এটি ভুল ধারণা। জ্বর হলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি শরীর চনমনে হয়। ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করা ভালো।
সত্যিই ঠান্ডা জলে গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। এটি ত্বকের নীচের রক্তনালীগুলিকে ছোট করে তোলে। কাঁপুনি শুরু হতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত হলে সত্যিই গরম পানিতে গোসল করা অনুপযুক্ত।
পুরো শরীর মোছার জন্য একটি ভেজা তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করা গোসলের বিকল্প। এই পরিস্থিতিতেও উষ্ণ জল ব্যবহার করা উচিত।
জলপট্টি ও বরফের ব্যবহার
যখন একজন ব্যক্তির জ্বর হয়, তারা সাধারণত তাদের কপালে জলপট্টি লাগান। তবে জ্বর বেশি হলে কুঁচকি বা বগলে বরফ দেওয়া যেতে পারে। এখানে, রক্তনালীগুলি তুলনামূলকভাবে বড়। ফলে ঠান্ডা প্রয়োগ করলে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। বরফের খণ্ড গামছা বা কাপড়ে পেঁচিয়ে উল্লিখিত স্থানে কিছুক্ষণ চেপে রাখলে দ্রুত তাপমাত্রা কমে যাবে। ১০-১৫ মিনিট এগুলো রাখা যেতে পারে।
খাবার ও পোশাক
জ্বর হলে তরল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বেশি খাবার একসঙ্গে খাওয়ানো উচিত নয়। কেননা, এটি শরীরের তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। বদহজম হতে পারে। এ সময় সুতি কাপড়ের জামা পরা দরকার, যাতে ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়। দরজা-জানালা খুলে দেবেন, পাখা ছেড়ে দেবেন, যাতে বাতাস চলাচল করে।
ঘুম ও বিশ্রাম
পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম পাওয়া এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমিউন সিস্টেম কার্যকর থাকার জন্য প্রতি রাতে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। শরীরের চাহিদার উপর নির্ভর করে দিনের বেলা বিশ্রাম প্রয়োজন।
পানি পান
জ্বর হলে পানিশূন্যতার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা যত বেশি হবে, পানিশূন্যতার আশঙ্কা তত বাড়বে। এ ছাড়া জ্বরের সময় ক্ষুধামান্দ্য ও বমি—এ দুটি পানিশূন্যতার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ডিহাইড্রেশনের ফলে পেশীতে অস্বস্তি বা ক্র্যাম্প হতে পারে। প্রস্রাব উত্পাদন এবং রক্তচাপ উভয়ই হ্রাস পেতে পারে।
মনে রাখুন
জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে; অত্যধিক মাত্রায় জ্বর হলে কিংবা তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বমি ও তীব্র পেটব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জ্বর হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত
তৌফিক আহমেদ বলছেন, বাংলাদেশে এটা একটা নিয়মিত প্রবণতা যে, জ্বর হলে নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ অনেকেই কিনে খেতে শুরু করেন। জ্বরের প্রথমদিকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কোন ক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়
জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
Cefaxil 500 MG Tablet এর কোন বিকল্প আছে?
সেফটাম ট্যাবলেট 500 মি.গ্রা
ট্যাবলেট Zefu 500 MG
ফারবে ৫০০ এম জি ট্যাবলেট (Fervay 500 MG Tablet)
ট্যাবলেট Foru 500 MG
বাচ্চাদের জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম
শিশু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বাচ্চাদের জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম এ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই জানতে আগ্রহী হন। আর অবশ্যই প্রত্যেকটি গার্জিয়ান তাদের শিশুর সঠিক যত্নের জন্য এবং জ্বর থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শিশুর জ্বরের এন্টিবায়োটিক জানতে চায়।
একটি অ্যান্টিবায়োটিক একটি ওষুধ যা দ্রুত যেকোনো ধরনের অসুস্থতা নির্মূল করে এবং রোগীর শক্তি ও স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে। এই কারণে, আমরা সবাই জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে জানতে চাই যাতে আমরা দ্রুত আমাদের সুখ রক্ষা করতে পারি।
বাচ্চাদের জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম।
নিম্নলিখিত তালিকায় শিশুদের জ্বরের জন্য ৫টি সুপরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে:
ওডাজিথ সিরাপ (Odazyth)।
জিম্যাক্স সিরাপ (Zimax)।
এ সি ই সিরাপ (Ace)।
রেনোভা (Renova)।
ভেরিক্সিম (Verixim)।
নীচে তালিকাভুক্ত জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিকগুলি হল সেই ওষুধগুলির নাম যা আপনি আপনার সন্তানকে জ্বরের চিকিত্সার জন্য দিতে পারেন৷ স্বাভাবিকভাবেই, আপনার শিশুকে উপযুক্ত জ্বর প্রতিরোধের জন্য এই সমস্ত ওষুধগুলি পরিচালনা করতে পারে।
জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার শিশুকে এন্টিবায়োটিক দেওয়ার পূর্বে কিছু করণীয় বা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। আর এই সকল পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে আপনার শিশুর শরীরে এন্টিবায়োটিক ঔষধের কোন পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া পরিলক্ষিত হবে না।
বাচ্চাদের এন্টিবায়োটিক দেওয়ার নিয়ম
শরীরে যেকোনো ধরনের রোগ এন্টিবায়োটিক ঔষধ যেমন খুব দ্রুত নিরাময় করে থাকে ঠিক অপরদিকে এই এন্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া দেখা যায়। আর অবশ্যই যেকোন ঔষধের পার্শ্ববর্তী ক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
আর, আপনার সন্তানের শরীরে জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক থেকে কোনো নেতিবাচক পরিণতি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। জ্বর আছে এমন শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার নির্দেশিকা হল রেজিমেন।
আপনি কিভাবে আপনার শিশুকে জ্বরের এন্টিবায়োটিক ঔষধে দিবেন তা উল্লেখ করা হলো:
চিকিৎসকের পরামর্শে, শিশুর বয়সের উপর ভিত্তি করে ওষুধের একটি নির্দিষ্ট ডোজ দেওয়া উচিত।
কোনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের আগে সংবেদনশীলভাবে খান, তবে খুব বেশি যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
কোনো ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে যুবকের সঠিক অসুস্থতা রয়েছে।
শিশুকে এই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে, শরীরকে শান্ত করার পদক্ষেপ নিন। যেমন, গোসল করা।
যুবককে যেকোন উপায়ে ভয় দেখানো এড়িয়ে চলুন কারণ এর ফলে তারা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ভয় পেতে পারে।
এই মৌলিক বিবেচনার ভিত্তিতে, আপনার অবশ্যই আপনার শিশুকে জ্বরের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত।
কারণ কোনো নির্দেশিকা না মেনে আপনার সন্তানকে জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করলে নেতিবাচক প্রভাব নিঃসন্দেহে প্রকাশ পাবে।
শিশুর জ্বর হলে সিরাপ, নাকি সাপোজিটরি
শিশুদের জ্বর কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য তাকে স্বস্তি দেওয়া। মূল অসুখের নিরাময় হলে (ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ইউটিআই, টাইফয়েড ইত্যাদি) জ্বরও কমে যায়। তাই জ্বরের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে, জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা দেওয়া।
শিশুর জ্বর যদি 102.2 ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম হয় এবং তাদের কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে (যেমন হৃদরোগ, পূর্বের চিকিৎসাজনিত ব্যাধি বা জ্বরজনিত খিঁচুনি) তাহলে তার চিকিৎসা করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে তাপমাত্রা বেশি হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে।
জ্বর কমানোর সাধারণ ব্যবস্থা
শিশুকে খোলামেলা ঘরে রাখা, যথাসম্ভব কম কাপড়চোপড় (একপ্রস্থের কাপড়) পরানো, শিশুর শরীর আলতোভাবে মালিশ করা। বারবার পানি পান ও তরল খাবার খাওয়ানো।
সর্বশেষ গবেষণা অনুসারে, জ্বর কমাতে কুলিং ব্যান্ড, স্পঞ্জিং বা অন্য কোনো পরিপূরক ও বিকল্প ওষুধ ব্যবহারের ন্যূনতম প্রভাব রয়েছে।
শিশুর অতিরিক্ত জ্বর কমিয়ে আনতে জলশোষক তোয়ালে, কুসুম গরম পানিতে চুবিয়ে প্রথমে পা, বুক, পিঠ ও কপাল—এভাবে পর্যায়ক্রমে ১৫ থেকে ২০ মিনিট শরীর স্পঞ্জ করা।
প্যারাসিটামল সিরাপ
শিশুবয়সে ওজন হিসাবে প্যারাসিটামল সিরাপ ১০-১৫ মিলিগ্রাম/কেজি প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর সেবন করানো যায়। কিন্তু দৈনিক পরিমাণ যেন ৬০ মিলিগ্রাম/প্রতি কেজির বেশি না হয়।
প্যারাসিটামল প্রসবের ৩০ মিনিট পরে চিকিৎসা শুরু হয় এবং ১-২ ঘন্টা পরে শিশুর তাপমাত্রা প্রায় 2 থেকে 3 ডিগ্রী ফারেনহাইটে নেমে যায়।
প্যারাসিটামল সাপোজিটরি
প্যারাসিটামল ১০-২০ মিলিগ্রাম/কেজি ওজন হিসাবে পায়ুপথে প্রয়োগ করা যায়। সিরাপ সেবনের তুলনায় পায়ুপথে প্যারাসিটামলের কার্যকারিতা দেরিতে (ওষুধ প্রয়োগের প্রায় ৬০ মিনিট পর) শুরু হয়।
সিরাপ ব্যবহারের সমান ফল পেতে পায়ুপথে বেশি মাত্রার প্যারাসিটামল (৩০ মিলিগ্রাম/কেজি ওজন) দিতে হয়।
করণীয়
শিশুদের জ্বর কমাতে সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ।
ভুল ডোজ আইবুপ্রোফেন থেকে অন্ত্র বা রেনাল ক্ষতি এবং প্যারাসিটামল থেকে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে।
প্রাথমিক শৈশবে যে কোনও ওষুধ মুখে মুখে নেওয়া উচিত।
যখন একজন যুবক অজ্ঞান থাকে এবং ক্রমাগত বমি করে এবং মুখে খাওয়ানো একেবারেই সম্ভব হয় না, তখনই
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url