মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি

মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি?

এ বিষয়ে প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। মৌলিক মানবাধিকার হল সেগুলি যা একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। কিছু অধিকার রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে অপরিহার্য বলে মনে করা হয় এবং সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিকারের জন্য রাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে।

মৌলিক অধিকার হল এমন অধিকার যা সকল মানুষের জন্য সার্বজনীন, সহজাত ও হস্তান্তরযোগ্য এবং যা এড়ানো যায় না। এই অধিকারগুলি প্রত্যেক মানুষের জন্মগতভাবে প্রাপ্য এবং এগুলিকে আইন দ্বারা রক্ষা করা হয়।
মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি

মৌলিক অধিকার কি?

মৌলিক অধিকার এমন অধিকার যা মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এই অধিকারগুলো মানুষের স্বাভাবিক অবস্থার অংশ এবং সমাজে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সন্মানজনক জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। মৌলিক অধিকার সাধারণত আইন, সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক সনদ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।

মৌলিক অধিকার মানুষকে নির্দিষ্ট স্বাধীনতা ও সুযোগ প্রদান করে, যা তার পূর্ণ মানবিক সম্ভাবনা অর্জন করতে সহায়তা করে। এই অধিকারগুলির মাধ্যমে ব্যক্তি তার জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় এবং একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন কাটাতে পারে।

মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি

নিশ্চিতভাবে! মানুষের মৌলিক অধিকার হলো সেই অধিকারগুলি যা মানুষের জীবনযাপনে মৌলিক এবং অপরিহার্য। এগুলি নিশ্চিত করা হলে মানুষ তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে। সাধারণত মৌলিক অধিকার ছয়টি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত হয়:

আরো পড়ুন: বন্যার কারণ ও প্রতিকার

১. খাদ্য:মানুষের প্রাথমিক চাহিদা হলো খাদ্য। খাদ্য হচ্ছে জীবনের মৌলিক উপাদান যা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। যথাযথ পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করলে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে ক্ষতি হতে পারে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. বাসস্থান:বাসস্থান বা ঘর মানুষের মৌলিক অধিকার। নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর বাসস্থান না থাকলে মানুষের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং মানসিক সুস্থতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একটি ভাল বাসস্থান মানুষের নিরাপত্তা, শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
৩. পোশাক:পোশাক মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। পোশাক শরীরকে আবৃত করে এবং আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি ব্যক্তি নিজেকে সম্মানিত এবং স্বচ্ছন্দ অনুভব করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. শিক্ষা:শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার যা তাকে দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়। শিক্ষা মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এটি ব্যক্তিকে সমান সুযোগ ও উন্নতির পথে পরিচালিত করে।
৫. চিকিৎসা:চিকিৎসা হলো মৌলিক অধিকার যা মানুষের সুস্থতা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সুবিধা ও ওষুধ প্রদান নিশ্চিত করা হলে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়।
৬. নিরাপত্তা:নিরাপত্তা হলো মৌলিক অধিকার যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা প্রদান করে। এটি এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করে যেখানে মানুষ নিজেদেরকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে করতে পারে। নিরাপত্তা সাধারণভাবে আইন শৃঙ্খলা, সামাজিক সেবা, এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ

বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহ মূলত "মৌলিক অধিকার" নামক অধ্যায়ে উল্লেখিত রয়েছে। এই অধিকারগুলি নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত। সংবিধানের অংশ হিসেবে মৌলিক অধিকারগুলি মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নিচে বাংলাদেশ সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো:

১. জীবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (ধারা ৩২):নাগরিকদের জীবন এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার সুরক্ষিত। কারো জীবন বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেয়া যাবে না।
২. মুক্ত চিন্তা ও প্রকাশের স্বাধীনতা (ধারা ৩৯):মুক্ত চিন্তা, মতামত প্রকাশ ও প্রচারের স্বাধীনতা সকল নাগরিকের অধিকার। তবে, এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, বা জনস্বার্থের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
৩. সমাবেশ ও সংঘের স্বাধীনতা (ধারা ৩৯):নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন গঠনের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে, এটি আইন এবং শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে হতে পারে।
৪. অভিবাসন ও বসবাসের স্বাধীনতা (ধারা ৪১):নাগরিকরা দেশের অভ্যন্তরে স্বাধীনভাবে যাতায়াত ও বসবাসের অধিকার ভোগ করে। বিদেশে যাওয়ার অধিকারও রয়েছে।
৫. ধর্মীয় স্বাধীনতা (ধারা ৪১):নাগরিকদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।
৬. সমান অধিকার (ধারা ২৮):সব নাগরিকের সমান অধিকার ও সুযোগ রয়েছে, যা কোনো ধরণের বৈষম্য যেমন ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে হতে পারে না।
৭. শিক্ষার অধিকার (ধারা ১৭):শিক্ষার অধিকার সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সকল নাগরিককে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হবে।
৮. শ্রমিকদের অধিকার (ধারা ৩৪):শ্রমিকদের শ্রম, শর্তাবলী, এবং শ্রমিক অধিকার সুরক্ষিত এবং তাদের শোষণ রোধ করা হবে।
৯. আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা (ধারা ১৫):রাষ্ট্র জনগণের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যাতে তারা পর্যাপ্ত খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদি সুবিধা পেতে পারে।
১০. সংবিধান পরিবর্তন ও মৌলিক অধিকার (ধারা ৮):সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি অপরিবর্তনীয় এবং সংবিধান পরিবর্তন দ্বারা সেগুলি হ্রাস করা যাবে না।

যদি কেউ আমার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, আমি কি মামলা করতে পারি?

হ্যাঁ, যদি কেউ আপনার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, আপনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে:
১. বিচার বিভাগীয় প্রতিকার

হাইকোর্টে রিট পিটিশন: বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা যেতে পারে। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এই রিট পিটিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হতে পারে, বা আপনার অধিকার পুনঃস্থাপন করা হতে পারে।
আইনগত পরামর্শ:একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে বিষয়টি সঠিকভাবে বিচার করার জন্য আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। আইনজীবী আপনাকে মামলা করার প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র সম্পর্কে সাহায্য করতে পারবেন।
২. অভিযোগ ও আবেদন
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা সচিবালয়ে আবেদন:মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা সচিবালয়ে অভিযোগ দাখিল করা যেতে পারে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন:জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ দাখিল করা যেতে পারে। কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
৩. ফৌজদারি মামলা:যদি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন একটি ফৌজদারি অপরাধের অন্তর্গত হয় (যেমন ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন), তাহলে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য থানায় মামলা করা যেতে পারে।
৪. নাগরিক সমাজের সহায়তা:বিভিন্ন নাগরিক সমাজ সংস্থা ও অধিকার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সহায়তা ও পরামর্শ দিতে পারে। তারা আপনাকে আইনি সহায়তা, সচেতনতা তৈরি এবং মামলা পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে।
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা:চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার যা নাগরিকদের তাদের চিন্তা, মতামত ও বিশ্বাসের প্রতি স্বাধীনতা প্রদান করে। এই অধিকারটি রাষ্ট্রের আইনি সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সংবিধানে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা

বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৩৯ অনুযায়ী:
মত প্রকাশের স্বাধীনতানাগরিকরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এর মধ্যে সাংবাদিকতা, প্রবন্ধ, বই লেখা ও প্রকাশনার অধিকার অন্তর্ভুক্ত।
তবে, এই স্বাধীনতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতি না করার শর্তে সীমাবদ্ধ হতে পারে।
মুক্ত সমাবেশ ও সংঘের স্বাধীনতানাগরিকরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন গঠনের অধিকার রাখেন।
এই অধিকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড

চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও সনদে সুরক্ষিত। উল্লেখযোগ্য কিছু সনদ হলো:জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ: এই সনদের ১৯ নম্বর ধারা নাগরিকদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদ (ICCPR): এর ১৮ নম্বর ধারা চিন্তা, বিবেক এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে।
চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার গুরুত্বব্যক্তিগত স্বাধীনতা: এটি ব্যক্তির চিন্তা ও মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশের সুযোগ দেয়, যা তার সৃজনশীলতা ও ব্যক্তিগত উন্নয়নকে উত্সাহিত করে।
গণতন্ত্রের ভিত্তি: গণতান্ত্রিক সমাজে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা একটি মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে, যা নাগরিকদের তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয় এবং সমাজে সুষ্ঠু আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে।
মানবাধিকার সংরক্ষণ: এটি মানবাধিকারের একটি মৌলিক অংশ যা মৌলিক স্বাধীনতা ও অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে।

সীমাবদ্ধতা

যদিও চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার, এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, বা জনস্বার্থের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:অভব্য ভাষা বা বক্তব্য: সহিংসতা বা বিদ্বেষ উসকে দেয়া বক্তব্য সীমাবদ্ধ হতে পারে।
গোপনীয়তা লঙ্ঘন: অন্যের গোপনীয়তা বা নিরাপত্তার বিরুদ্ধে গিয়ে চিন্তা ও মতামত প্রকাশ করা যাবে না।

উপসংহার:মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নীতি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন। খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা—এসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার এবং সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যা মানুষের উন্নয়ন ও সম্মান সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url