খালি পেটে কলা খেলে কি হয়-সকালে খালি পেটে কমলা খেলে কি উপকার হয়?
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে কমলা খেলে কি উপকার হয়?
এখন কমলালেবুর মরশুম। দুপুরবেলা শীতের মিঠে রোদে বসে কমলালেবু না খেলে, সকালে খালি পেটে এই ফল খান। এই ফল ভিটামিন সি ও ফাইবারে পরিপূর্ণ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। র্যাশবেরি, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরির মতো ফল ভিটামিন, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
সকালের খাবারে কলার গুরুত্ব বরাবরই আলাদা। অধিকাংশই ব্রেকফাস্টে কলা খেতে চান। অনেকে আবার খালি পেটেই কলা খেয়ে নেন। কিন্তু খালি পেটে ক?
প্রাতরাশ বা ব্রেকফাস্ট। দিনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কথায় বলে, সকালের খাবার রাজার মতো খাওয়া উচিৎ। কারণ সকালের প্রথম খাবারই সারা দিনের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই অনেকেই ডায়েট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চলেন। অনেকে আবার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করেন। তবে সকালের খাবারে কলার গুরুত্ব বরাবরই আলাদা। অধিকাংশই ব্রেকফাস্টে কলা খেতে চান। অনেকে আবার খালি পেটেই কলা খেয়ে নেন। কিন্তু খালি পেটে কি কলা খাওয়া উচিৎ?
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নেওয়া যাক বিশদে!
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, কলার উপকারিতা বিষয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কলা খেলে হৃদযন্ত্র ভাল থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও অবসাদ কমে যায়। এর পাশাপাশি কলায় কোষ্ঠকাঠিন্যও কমে। এতে আয়রন থাকে। তাই অ্যানিমিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে কলা। এক্ষেত্রে এই উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফলের মধ্যে ট্রিপটোফান, ভিটামিন B6, ভিটামিন B, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ একাধিক উপাদান থাকে।
কিন্তু খালি পেটে কি কলা খাওয়া যায়? একাধিক প্রতিবেদন এই বিষয়টি নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসে। আর এর পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ডায়েট বিশেষজ্ঞদের মতে, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। তাই খালি পেটে কলা খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ, কলায় উপস্থিত অধিক মাত্রার সুগার শরীরের উপরে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। এই বিষয়ে বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ড. অনুজ সুদ (Dr. Anju Sood) জানিয়েছেন, কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। সকালবেলায় খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু খালি পেটে নয়। কারণ খালি পেটে কলা খেলে অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে ড্রাই ফ্রুটস, আপেল বা অন্যান্য ফল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। খালি পেটে কলা খেলে, রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। হৃদযন্ত্রের উপরেও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
কী বলছে আয়ুর্বেদ?
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, সকাল সকাল খালি পেটে ফল খাওয়া উচিৎ নয়। এই বিষয়ে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ড. বি এন সিনহা (Dr. BN Sinha) জানিয়েছেন, শুধু কলা নয়, খালি পেটে যে কোনও ফল এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। আজকাল অধিকাংশ ফলেই প্রচুর পরিমাণে সার-ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তাই খালি পেটে ফল না খাওয়াই ভাল। এগুলি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে ফল বা কলা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে সব চেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
তাই সকালে কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে অন্য কোনও খাবারের সঙ্গে কলা মিশিয়ে খেলে ভাল হয়। এতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়। শরীরও ভাল থাকে। এক্ষেত্রে কলার সঙ্গে ওটস, বেরি, ম্যাপল সিরাপ, বাদাম বা এই জাতীয় জিনিসও কিনে আনতে হবে। তার পর বানিয়ে নিতে হবে পছন্দমতো ব্রেকফাস্ট। এর জেরে শরীরেও কোনও সমস্যা হবে না। যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছেন, তাঁদের জন্যও এই ধরনের রেসিপি বেশ কার্যকরী।
সকালে কী ভাবে খাওয়া যাবে কলা? এক্ষেত্রে কলার মধ্যে ওটস, বেরি বা এই জাতীয় নানা জিনিস মিশিয়ে বেশ স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু ব্রেকফাস্ট বানানো যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক!
বানানা ওটমিল কুকিজ (Banana Oatmeal Cookies)
স্বাদের পাশাপাশি বেশ স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশ এটি। এক্ষেত্রে এক কাপ মতো ওটস, কলা, ম্যাপল সিরাপ, বাদাম নিতে হবে। এর পর পরিমাণ মতো সব কিছু মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই বিশেষ ব্রেকফাস্ট।
বেরি বানানা সিরিয়াল (Berry Banana Cereal)
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি হয় কলার এই রেসিপি। এক্ষেত্রে কলা ও বেরি ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। পরে দুধ মেশাতে হবে। এর স্বাদও বেশ ভাল।
চকোলেট বানানা স্মুদি (Chocolate Banana Smoothie)
ব্রেকফাস্টের ক্ষেত্রে ভাল অপশন হতে পারে। রোজকার রুটিনে বদল আনতে পারে চকোলেট ও কলার এই রেসিপি। চকোলেট বানানা স্মুদি তৈরি করতে মূলত কলা, বাদাম, দুধ ও কোকো পাউডার লাগে।
কলা খেলেই কি বাড়ে গ্যাস-অ্যাসিডিটির আশঙ্কা? পুষ্টিবিদের থেকেই জেনে নিন এই ধারণা সত্যি নাকি সবটাই জল্পনা!
কলার মতো একটি অত্যন্ত উপকারী ফল খেলে কি গ্যাস, অ্যাসিডিটির ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে? এই বিষয়েই নিজের মতামত দিলেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ।
সাধ্যের মধ্যে থাকা অত্যন্ত উপকারী একটি ফল হল কলা। তাই তো ধনী থেকে দরিদ্র, সব পরিবারেই কলার অবাধ যাতায়াত। এই সুস্বাদু ফল খেয়েই দেহে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণ করছে ৮ থেকে ৮০।
তবে এহেন উপকারী একটি ফলকে নিয়েও কিন্তু জনমানসে বিভ্রান্তি কম নেই। আসলে আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে, এই ফল খেলেও পিছু নিতে পারে গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো উটকো সমস্যা। তাই তাঁরা অচিরেই কলা খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, আদৌ কি কলা খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটির ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে? নাকি এমন ধারণাটাই ভুঁয়ো? এই বিষয় সম্পর্কে জানতেই আমরা যোগাযোগ করেছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরির সঙ্গে। তিনিই এই বিষয়ে আমাদের বিশদে জানালেন।
১. ভিটামিন ও খনিজের ভাণ্ডার হল কলা:পুষ্টিবিজ্ঞানীদের কথায়, শরীরকে সুস্থ রাখতে যে যে ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন তার অধিকাংশেরই ভাণ্ডার হল কলা। এতে মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি, ফাইবার, রাইবোফ্ল্যাভিন, ফোলেট, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম সহ একাধিক উপকারী উপাদান। সেই সঙ্গে এই ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সন্ধানও মেলে। তাই নিয়মিত কলা খাওয়া হল মাস্ট। এই কাজটা করলেই আপনার দেহে পুষ্টর ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। এমনকী একাধিক ছোট বড় রোগও থাকবে দূরে দূরে।
২. শরীরের হাল ফিরবে অল্পদিনে:কোয়েল পাল চৌধুরির কথায়, রোজ মাত্র একটা কলা খেলেই একাধিক চোখ ধাঁধানো উপকার মিলবে। যেমন ধরুন-
কোষ্ঠকাঠির সমস্যা দূর হবে
হার্ট থাকবে সুস্থ সবল
দেহে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য ফিরবে
চাঙ্গা হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
এনার্জির ঘাটতিও মিটে যাবে।
৩. কলার সঙ্গে কি গ্য়াস-অ্যাসিডিটির কোনও যোগ রয়েছে?
এই ধারণাকে সর্বৈব ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দিলেন কোয়েল পাল চৌধুরি। তাঁর কথায়, কলা হল অ্যালকালাইন ধর্মী একটি ফল। তাই এই ফল খাওয়ার পর অ্যাসিডের বাড়বাড়ন্ত কমবে বই বাড়বে না। এমনকী পাকস্থলীর লাইনিং-এর উপর একটি প্রোটেকশন লেয়ার তৈরি করে কলা। সেই সঙ্গে খাবার হজমেও সাহায্য করে এই ফল। তাই যাঁরা নিয়মিত পেটের সমস্যায় ভোগেন তাঁরা অবশ্যই কলা খান। এতেই আপনাদের জটিলতা কমবে।
৪. প্রতিদিন কলা খাওয়া উচিত?
যে কোনও সুস্থ ব্য়ক্তি প্রতিদিন ১টা কলা খেতে পারেন। এতে কোনও সমস্যার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে।
তবে কোয়েল পাল চৌধুরি একথাও জানালেন যে, পেট ভরে খাবার খাওয়ার পর কলা বা কোনও ফলই খাওয়া উচিত নয়। বরং দুটি মিলের মাঝখানে ফল খাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তবেই কিন্তু ফলের সমস্ত পুষ্টিগুণ মিলবে। নচেৎ একাধিক সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে বৈকি!
৫. কারা কলা খাবেন না?
ডায়াবিটিস রোগীরা রোজ রোজ কলা খাবেন না। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে।
এছাড়া ক্রনিক কিডনির রোগ কিংবা ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ডায়েটেও কলা রাখা উচিত নয়। এই কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্র বাদে, সকলেই নিশ্চিন্তে কলা খান আর স্বাস্থ্যের হাল ফেরান
আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url