গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না ও কোনটি খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না ও কোনটি খাওয়া যাবে

গর্ভাবস্থায় যেসকল ফল খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন প্রায় অতিরিক্ত 300 ক্যালোরি প্রয়োজন। এই ক্যালোরি ফল, সবজি, দানাশস্য ও প্রোটিনের স্বাস্থকর ও সুষম মিশ্রণ থেকে আসা উচিত।

এগুলির মধ্যে ফল গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রেখে এবং মা ও সন্তানকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান সরবরাহ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফল ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা মা ও সন্তান, উভয়েরই প্রয়োজন। নিউরাল টিউবের অস্বাভাবিকতা এড়াতে, গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন কমপক্ষে 70 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং 0.4 মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত। ফলের ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না ও কোনটি খাওয়া যাবে


তবে বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ফল খাওয়া নিরাপদ নয়। অনেক ফল শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, আবার অনেক ফল প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান বের করে দিতে পারে। তাই ফলের বিরূপ প্রভাব এবং সেগুলি খাওয়ার আগে তাঁরা কীভাবে নিজেদের শরীরকে প্রভাবিত করতে পারেন, সে সম্বন্ধে গর্ভবতী মহিলাদের জানা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে আমরা এমন কিছু ফলের কথা বলেছি যেগুলি গর্ভাবস্থায় মহিলাদের না খাওয়া উচিত।

পেঁপে: আধা কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে ল্যাটেক্স যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। এটা কেবল পাকস্থলীতে ব্যথাই সৃষ্টি করে না পাশাপাশি গর্ভের সন্তানেরও ক্ষতি করে। এই সময় পেঁপে না খাওয়াই ভালো। অন্যথায় তা ব্যথা ও গর্ভপাত ঘটাতে পারে।

আনারস: আনারস একটা টক মিষ্টি ফল। এতে থাকা ব্রোমেলাইন নামক উপাদান জরায়ুর পথকে কোমল করে যা প্রারম্ভিক ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, আনারস খাওয়া গর্ভাবস্থায় ডায়ারিয়ারও কারণ হতে পারে।

আঙুর: গর্ভবতী নারীদের জন্য আঙুর খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বিশেষত শেষের তিন মাসে। এতে থাকা রেসভেরাট্রল নামক যৌগ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। আঙুরে আছে তাপ উৎপাদনকারী উপাদান যা মা ও শিশু ক্ষতির কারণ হতে পারে।

হিমায়িত ফল: হিমায়িত ফলে সংরক্ষক ব্যবহার করে স্থায়ীত্ব বাড়ানো হয় এবং এটা কোনোভাবেই গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজ্য নয়। হিমায়িত ও ‘ক্যানজাত’ ফল তাজা নয় এবং এটা অনেক ক্ষেত্রে শিশুর জন্য বিষাক্ত হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের তাজা ও মৌসুমী ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো উপায়।

বরফে জমানো বেরি
গর্ভাবস্থায় বরফে জমানো ফলের বদলে টাটকা ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বরফে জমানোর কারণে ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাই মহিলারা গর্ভাবস্থায় বরফে জমানো বেরি খান না। কিছু ক্ষেত্রে, বরফে জমানো বেরি মা ও সন্তান উভয়ের পক্ষেই ক্ষতিকর হতে পারে।

ক্যানে ভরা টমেটো
গর্ভবতী মহিলাদের ক্যানে ভরা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। বিশেষ করে ক্যানে ভরা টমেটোতে প্রিজারভেটিভ থাকার ফলে এগুলি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ক্যানে ভরা টমেটোর তুলনায় টাটকা টমেটো ভাল।

তরমুজ
গ্রীষ্মকালে আমাদের প্রিয় ফল তরমুজ। গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো, যদিও এটি শরীরে উৎপন্ন টক্সিনকে হাইড্রেট করে, অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যকে ক্ষতি করার অসংখ্য বিষের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে এই ফল প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদানও শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। এছাড়া, অতিরক্ত পরিমাণে এই ফল খেলে শরীরে চিনির মাত্রা বাড়তে পারে। তবে, কিছু মানুষ এটি শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খান।

খেজুর
খেজুর স্বাস্থ্যকর এবং এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিউপাদান, যেমন আয়রন ও অন্যান্য খনিজ থাকে, কিন্তু এটি গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়া উচিত নয়। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল এটি শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে; কিছু ক্ষেত্রে খেজুর খেলে জরায়ুতে যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। দিনে একটি করে খেজুর খেলে কোনও ক্ষতি হওয়া উচিত নয়, কিন্তু এতে শরীরে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তা বুঝে তবেই এগোনো উচিত।

তেঁতুল
গর্ভাবস্থায় তেঁতুল না খাওয়া ভালো। তেঁতুলে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ কমায়। শরীরে এই হরমোন কমে গেলে জরায়ুর সংকোচন হয়। তখন গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।

এই ফলগুলি এড়িয়ে চললেও গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায়, এমন ফলের তালিকা বেশ বড়। ফল আপনাকে হাইড্রেট করে রাখে এবং এতে বহু পুষ্টিউপাদান আছে, যেগুলি মহিলাদের সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী মহিলাদের বিভিন্ন ধরণের ফল যেমন আপেল, কলা, অ্যাভোকাডো, আম, কমলা এবং আরও অনেক কিছু খাওয়া উচিত। খাওয়ার আগে, ফল ভাল করে ধুয়ে ফেলতে ভুলবেন না এবং খারাপ অংশ ফেলে দিন কারণ সেগুলি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত হতে পারে।

এছাড়া, আগে থেকে কেটে রাখা ফল না খেয়ে টাটকা কাটা ফল খান। তবে, প্রত্যেকের শরীরের ধরন আলাদা, তাই আপনি কী ধরনের ফল খেতে পারেন, তা জানার জন্য অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় যে সকল ফল খাওয়া যাবে

মা হতে চলেছেন, এজন্য আপনাকে অভিনন্দন! অনাগত সন্তান নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে মনে অনেক প্রশ্নও আসছে। তার মধ্যে একটি বিষয় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হলো: আমার কী খাওয়া উচিত?

জীবনের সব পর্যায়েই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটা বিশেষভাবে জরুরি। সুষম খাবার আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার বিকশিত হওয়া এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

পরিবারের নতুন সদস্যের কল্যাণের জন্য কীভাবে আপনার খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনবেন, তা জানতে আমাদের টিপসগুলো দেখুন।

গর্ভধারণকালে সুষম খাবারের তালিকা

একটি পুষ্টিকর খাবার তালিকা তখনই নিশ্চিত হয় যখন মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সবগুলো খাদ্য উপাদানযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় থাকে

ফলমূল
শুকনো, হিমায়িত এবং তাজা ফল সবই উপকারী। খাবারের সময় ফল এবং সবজি আপনার প্লেটের অর্ধেক হওয়া উচিত।

শাকসবজি
টাটকা, ক্যানে সংরক্ষণ করা, হিমায়িত বা শুকিয়ে সংরক্ষণ করা শাকসবজি- এগুলোর যে কোনোটি আপনি খেতে পারেন। সালাদের জন্য পাতাওয়ালা গাঢ় সবুজ শাকসবজি পুষ্টিকর। খাবারের সময় আপনার প্লেটের অর্ধেক থাকবে ফলমূল ও সবজি।

শস্য বা গ্রেইন
আপনাকে খাবারের প্লেটে যে সব শস্য দেওয়া হবে, তার অর্ধেকটা ‘হোল গ্রেইন’ হতে হবে। হোল গ্রেইন হলো সেই সব খাবার যেগুলো প্রক্রিয়াজাত নয় এবং খাদ্যশস্যের পুরোটা থেকে আসা যেমন- ওটস, বার্লি, কুইনোয়া (কাওনের চাল), ব্রাউন রাইস (ঢেঁকিছাঁটা চাল) ও লাল আটা।

আমিষ
প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের আমিষযুক্ত খাবার রাখা গুরুত্বপূর্ণ। মাংস, পোল্ট্রি, শিম, মটরশুঁটি, ডিম, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার- এগুলোর সবই আমিষসৃমদ্ধ খাবার।

তেল ও ফ্যাট
স্নেহজাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে প্রাণিজ ফ্যাট খাওয়াটা সীমিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্যান্য খাবারে পাওয়া যায় যেমন, কিছু মাছ, অ্যাভোকোডো ও বাদাম। খাবারে তেল আসে মূলত উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে (যেমন অলিভ ওয়েল ও ক্যানোলা ওয়েল)।


ফল

একজন মহিলার জীবনের সেরা সময়ের মধ্যে একটি হল গর্ভাবস্থা। একসাথে এতগুলি বিচিত্র আবেগ অনুভব করার জন্য এর চেয়ে ভাল মুহূর্ত আর কখনও হয়নি। আশপাশের সবার আচরণও যেন একটু বেশিই ভালো হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ সময় ডায়েট ভুলে আপনি যা খুশি তা-ই (স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়িয়ে—যেমন অ্যালার্জি থাকলে এমনিতেই ওই জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না) যত ইচ্ছা তত খেতে পারেন। যা খেলে, যা করলে আপনার ভালো লাগে, আপনি সেগুলোই খাবেন, সেগুলোই করবেন। এই স্বাধীনতা জীবনের অন্য কোনো পর্যায়ে বিশেষ পাওয়া যায় না। এ সময় নানা কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা উঁকি দেয় মনের ভেতর। তবে একটি কাজ আপনি নিশ্চিন্তে করতে পারেন। তা হলো ফল খাওয়া। গর্ভাবস্থায় অনেকে আনারস, কামরাঙা, কাঁচা পেঁপে, অতিরিক্ত আঙুর ইত্যাদি খেতে নিষেধ করেন। তবে গর্ভাবস্থার জন্য এসব ফল ক্ষতিকর—এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ পাননি চিকিৎসকেরা। কোন ফলগুলো বেশি উপকারী, জেনে নেওয়া যাক।

১. পেয়ারা
দেশি, পুষ্টিকর আর হাতের নাগালে দাম—এমন ফলের তালিকায় প্রথমেই থাকবে পেয়ারার নাম। সারা বছর পাওয়া যায়—এমন একটি ফল পেয়ারা।

পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। বলা হয়, চারটি আপেল বা চারটি কমলার পুষ্টিগুণের প্রায় সমান একটি পেয়ারা। এ ফল গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।

২. কলা
আপনার গর্ভাবস্থায়, আপনাকে প্রতিদিন একটি বা তার বেশি কলা খাওয়া উচিত। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলস্বরূপ, যথাযথ স্নায়ু এবং পেশী ফাংশন অর্জন করা হয়।

গর্ভকালে এমনিতেই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সহজেই যেকোনো অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কলা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৩. কমলা
ফাইবার আর ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস হলো কমলা। ভ্রূণের মস্তিষ্ক আর মেরুদণ্ড গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে কমলায়।

৪. আপেল
গর্ভকালে প্রতিদিন অন্তত একটি আপেল খেলে বাচ্চার অ্যালার্জি ও অ্যাজমা হওয়ার শঙ্কা কমে যায়। আপেলে প্রচুর আয়রন থাকে, যা গর্ভাবস্থার হিমোগ্লোবিনের সংকট সামাল দিয়ে অ্যানিমিয়া রোধ করে।

৫. কিউই
এ ফলে আছে ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও ই, ক্যারোটেনয়েডস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস। এসব উপাদান হার্টের জন্য ভালো। এ ছাড়া কিউই ফল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রেখে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url