গরম থেকে বাঁচার উপায়-কি খেলে গরম কম লাগবে
গরম থেকে বাঁচার উপায়-কি খেলে গরম কম লাগবে
গরম থেকে বাঁচার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথমত, হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরা উচিত, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি, কারণ শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখা গরমে স্বস্তি দেয়। গরমের সময় বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা, এবং ছায়ায় থাকার চেষ্টা করা উচিত। ঘর ঠান্ডা রাখতে ভেন্টিলেশন বা ফ্যান ব্যবহার করা যায়, আর সম্ভব হলে এয়ার কন্ডিশনার চালানো যেতে পারে। এছাড়াও, ঠান্ডা পানীয় এবং হালকা খাবার গ্রহণ শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়ক।
শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, এবং এটির সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। শরীর স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাম উৎপন্ন করে, যা বাষ্পীভূত হয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু কিছু কারণে শরীর এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বাধা পায়, যার ফলে অতিরিক্ত গরম অনুভূত হতে পারে। নিচে এর কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো:
১. পরিবেশগত কারণ:উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা শরীরে অতিরিক্ত গরম অনুভূতির প্রধান কারণ। গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে শরীর সহজে ঘাম বাষ্পীভূত করতে পারে না, ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
২. ডিহাইড্রেশন:যথেষ্ট পরিমাণ পানি না খেলে শরীরের জলীয় ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই অবস্থায় শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাম উৎপন্ন করতে পারে না, ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং গরম অনুভব হয়।
৩. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম:শারীরিক পরিশ্রমের সময় শরীরের পেশিগুলো শক্তি উৎপন্ন করে এবং তার সঙ্গে তাপও তৈরি করে। যদি শরীর থেকে এই তাপ নিঃসরণ না হয়, তাহলে শরীর অতিরিক্ত গরম অনুভব করে।
৪. স্বাস্থ্যজনিত কারণ:কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন- হাইপারথাইরয়েডিজম, যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপন্ন করে, শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও, ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত সমস্যা বা ফিভার থেকেও শরীর অতিরিক্ত গরম হতে পারে।
৫. মেডিকেশন ও মাদকদ্রব্য:কিছু ওষুধ, যেমন- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, ব্লাড প্রেসার কন্ট্রোলার, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাছাড়া, কিছু মাদকদ্রব্যও শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে।
আরো পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত-কক্সবাজারে দর্শনের স্থান
৬. মেনোপজ ও হরমোনাল পরিবর্তন:মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যা 'হট ফ্ল্যাশ' এর মতো তাপ অনুভূতির কারণ হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে শরীর হঠাৎ করে গরম অনুভব করে এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
৭. অতিরিক্ত মেদ বা স্থূলতা:স্থূলতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে। শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকলে তাপ সঠিকভাবে নিঃসরণ হতে পারে না, যার ফলে শরীর সহজেই গরম হয়ে যায়।
৮. স্নায়বিক সমস্যা:কিছু স্নায়বিক সমস্যা বা অটোনমিক ডিসফাংশন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, ফলে শরীর অতিরিক্ত গরম লাগে।
৯. খাদ্য ও পানীয়:কিছু খাবার, যেমন মসলা ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তাপ উৎপন্ন করতে পারে। এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হয়।
প্রতিকার ও ব্যবস্থা:
- পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- হালকা, সুতির কাপড় পরা।
- সরাসরি রোদ থেকে দূরে থাকা।
- ভারী খাবার পরিহার করা।
- ঠান্ডা পরিবেশে থাকা।
মেডিকেল পরামর্শ নেওয়া, বিশেষ করে যদি হরমোন বা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে গরম অনুভূত হয়।
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি, শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার সমস্যায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
গরম থেকে বাঁচার উপায়
বেশি গরমে শরীর সুস্থ রাখতে এবং আরাম পেতে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গরমের সময় সঠিক যত্ন না নিলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হতে পারে, তাপঘাতের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে কিছু করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হলো:
১. পর্যাপ্ত পানি পান করা:গরমে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে, ফলে শরীর দ্রুত ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। এজন্য প্রচুর পানি পান করা জরুরি। তরলজাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় ইত্যাদিও খাওয়া ভালো।
২. ঠান্ডা পরিবেশে থাকা:যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা উচিত। এয়ার কন্ডিশনার, ফ্যান বা এয়ার কুলার ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের জানালা বন্ধ রেখে দিনের তীব্র গরম থেকে বাঁচা যেতে পারে এবং রাতের ঠান্ডা বাতাস ঢুকানোর জন্য জানালা খোলা রাখা যেতে পারে।
৩. ছাতা, টুপি বা সানগ্লাস ব্যবহার:যদি বাইরে যেতেই হয়, তাহলে ছাতা, টুপি বা সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। এটি শরীরকে সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করে এবং ত্বক ও চোখের ওপর প্রভাব কমায়।
৪. হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা:হালকা রঙের, ঢিলেঢালা এবং সুতির পোশাক পরা উচিত। সুতির কাপড় শরীর থেকে ঘাম শুষে নিয়ে ত্বককে শুষ্ক ও আরামদায়ক রাখতে সাহায্য করে।
৫. ভারী কাজ ও শরীরচর্চা এড়ানো:গরমে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী কাজ করা উচিত নয়, কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। শরীরচর্চা করতে হলে তা সকালে বা সন্ধ্যায় করা ভালো, যখন তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
৬. ঠান্ডা পানিতে গোসল:দিনে একাধিকবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে এবং স্বস্তি পাওয়া যায়।
৭. পুদিনা বা তুলসি পাতা ব্যবহার:পুদিনা বা তুলসি পাতার রস শরীরে ঠান্ডা ভাব আনতে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানীয়তে এই পাতা যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া পুদিনা বা তুলসির তেল দিয়ে শরীরে ম্যাসাজ করলে ত্বকে শীতলতা আসে।
৮. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা:গরমে ভারী খাবার যেমন- মসলাদার বা চর্বি সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। হালকা, জলীয় এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভালো, যেমন ফল, শাকসবজি, এবং তাজা সালাদ। তরমুজ, শসা, কমলালেবু, বাঙ্গি ইত্যাদি তাজা ফল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৯. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়ানো:ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই এই ধরনের পানীয় গরমে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
১০. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেওয়া:গরমের দিনে নিজের শরীরের তাপমাত্রা ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা জরুরি। মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম, বমি ভাব, ক্লান্তি বা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ছায়ায় বা ঠান্ডা জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই করণীয় গুলো মেনে চললে অতিরিক্ত গরমের সময়েও শরীর সুস্থ ও আরামদায়ক রাখা সম্ভব।
কি খেলে গরম কম লাগবে
গরমের দিনে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে শরীরকে শীতল রাখা যায় এবং গরম কম অনুভূত হয়। এই ধরনের খাবার শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। নিচে গরমে স্বস্তি দিতে সহায়ক কিছু খাবার উল্লেখ করা হলো:
১. তরমুজ:তরমুজে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং স্বস্তি দেয়। এটি খেলে শরীর ঠান্ডা অনুভব করে এবং তৃষ্ণা মেটে।
২. শসা:শসাও জলীয় উপাদানে সমৃদ্ধ এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। এটি সহজেই হজম হয় এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয়।
৩. ডাবের পানি:ডাবের পানি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইটসমৃদ্ধ, যা গরমে শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি দ্রুত হাইড্রেশন দেয় এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
৪. ফলমূল (যেমন- তরমুজ, বাঙ্গি, কমলালেবু):ফলমূল সাধারণত জলীয় উপাদানে সমৃদ্ধ এবং সহজে হজম হয়। বাঙ্গি, কমলালেবু, আনারস ইত্যাদি খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং ঠান্ডা অনুভব হয়।
৫. পুদিনা পাতা:পুদিনা পাতা শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। পুদিনা দিয়ে তৈরি ঠান্ডা পানীয় বা সালাদে পুদিনা মিশিয়ে খাওয়া শরীরের তাপমাত্রা কমায়।
৬. লেবুর শরবত:লেবুর শরবত বা লেবুর রস দিয়ে তৈরি পানীয় গরমে খুব উপকারী। এটি শরীরকে শীতল করে এবং ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে। লেবুর ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
৭. ইয়োগার্ট বা দই:ঠান্ডা দই বা লাচ্ছি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পেটের জন্যও ভালো। দই শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সহজে হজম হয়।
৮. শাকসবজি (যেমন- পালং শাক, লেটুস):শাকসবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি ও পুষ্টি থাকে। এগুলো শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং হালকা অনুভূতি দেয়। বিশেষ করে সালাদে এই ধরনের শাকসবজি খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯. ঠান্ডা ফলের জুস বা স্মুদি:তাজা ফল দিয়ে তৈরি ঠান্ডা জুস বা স্মুদি শরীরে তৃষ্ণা মেটায় এবং হাইড্রেটেড রাখে। এটি শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে।
১০. মিষ্টি দই বা রসগোল্লা:মিষ্টি দই বা রসগোল্লার মতো মিষ্টি খাবার শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি মুখের রুচিও বাড়ায়। এগুলো হালকা ও সহজে হজম হয়, যা গরমে আরাম দেয়।
১১. বার্লি পানি:বার্লির পানি গরমে খুবই উপকারী। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হাইড্রেশন বজায় রাখে, যা শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে।
১২. হালকা, ঝোলযুক্ত খাবার:গরমে হালকা, কম মসলাযুক্ত ঝোলযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এটি হজমে সাহায্য করে এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে। ভারী ও মশলাদার খাবার গরমের দিনে এড়িয়ে চলা উচিত।
এই ধরনের খাবারগুলো শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং গরমে স্বস্তি দেয়।
উপসংহার:গরম থেকে বাঁচার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি মেনে চলা জরুরি, যেমন পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা ও ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরা, ঠান্ডা পরিবেশে থাকা এবং ভারী কাজ ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলা। পাশাপাশি ডাবের পানি, তরমুজ, শসা ও লেবুর শরবত খাওয়া শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। সঠিক যত্ন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গরমের তীব্রতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হতে পারে।
আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url