কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়-দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়

কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো ভিটামিন সি এর অভাব। ভিটামিন সি শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এটি শরীরের টিস্যুগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন নামক প্রোটিন তৈরিতে ভূমিকা রাখে, যা মাড়ির দৃঢ়তা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অপরিহার্য।

যখন শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হয়, তখন মাড়ির টিস্যু দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে মাড়ি ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং কখনও কখনও রক্তপাতও হয়। ভিটামিন সি এর ঘাটতির কারণে স্কার্ভি রোগ দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে মাড়ি ফোলা, ব্যথা ও রক্তপাত অন্যতম লক্ষণ।
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়

ভিটামিন সি এর ঘাটতি প্রতিরোধে নিয়মিত তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে সাইট্রাস জাতীয় ফল, যেমন কমলা, লেবু, পেয়ারা, ব্রোকোলি এবং টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা এই অভাব পূরণে সহায়ক।

কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। দাঁতের মাড়ির সমস্যাগুলোর মধ্যে জিনজিভাইটিস এবং পিরিয়ডন্টাল ডিজিজ উল্লেখযোগ্য, যা মাড়িতে ব্যথা, লালচেভাব, এবং ফোলাভাবের সৃষ্টি করে। এসব সমস্যা মাড়িকে দুর্বল করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে মাড়ি ফুলে যাওয়ার মূল কারণগুলো আলোচনা করা হলো:

আরো পড়ুন: কি খেলে অধিক সময় মিলন করা যায়

১. ভিটামিন সি এর অভাব:ভিটামিন সি শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এটি কোলাজেন প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা মাড়ির টিস্যুকে দৃঢ় করে। ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ির টিস্যু দুর্বল হয়ে ফুলে যেতে পারে এবং সহজেই রক্তপাত হতে পারে। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ দেখা দেয়, যার লক্ষণ মাড়িতে ব্যথা ও ফোলাভাব।

২. জিনজিভাইটিস (Gingivitis):জিনজিভাইটিস হলো মাড়ির সাধারণ সংক্রমণ যা দাঁতে জমে থাকা প্লাক থেকে হয়। নিয়মিত দাঁতের যত্ন না নিলে প্লাক জমে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ফোলাভাবের কারণ হয়। এটি মাড়িতে ব্যথা, রক্তপাত এবং মুখে দুর্গন্ধও সৃষ্টি করে।

৩. পিরিয়ডন্টাল ডিজিজ (Periodontal Disease):পিরিয়ডন্টাল ডিজিজ বা গাম ডিজিজ জিনজিভাইটিসের চেয়ে মারাত্মক, যা মাড়ি ও দাঁতের মূলের চারপাশের অস্থিকে আক্রান্ত করে। এতে মাড়ি ফুলে যায় এবং দাঁতের ভিত্তি দুর্বল হয়, যা চিকিৎসা না করলে দাঁত নড়ে গিয়ে পড়তে পারে।

৪. হরমোন পরিবর্তন:মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে দাঁতের মাড়ি ফুলতে পারে। গর্ভাবস্থা, ঋতুস্রাব এবং মেনোপজের সময় হরমোনের ওঠানামা মাড়ির টিস্যুকে সংবেদনশীল করে তোলে।

৫. অ্যালার্জি বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া:কিছু ওষুধ যেমন ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বা ইমিউন সিস্টেম দমনের ওষুধ মাড়ির টিস্যুতে প্রভাব ফেলে। এছাড়া কিছু খাবারের অ্যালার্জিতেও মাড়ি ফুলে যেতে পারে।

৬. ধূমপান ও তামাক ব্যবহার:ধূমপান এবং তামাকের কারণে মাড়ির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এতে রক্তপ্রবাহ কমে, যা মাড়ির সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে মাড়িতে প্রদাহ ও ফোলাভাব দেখা দেয়।

৭. মুখের সংক্রমণ:মুখের ভেতরে ফাংগাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে মাড়িতে ফোলাভাব দেখা দেয়, যা মাড়ির আশেপাশে ব্যথা ও প্রদাহ তৈরি করে।

৮. দাঁতের পরিচর্যায় অবহেলা বা ভুল পদ্ধতি:দাঁতের যত্ন না নেওয়া বা অনিয়মিত ফ্লসিংয়ের কারণে মাড়ির ফাঁকে প্লাক জমে যায়, যা মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ব্রাশ করা বা শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে মাড়ির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফুলে যেতে পারে।

মাড়ি ফুলে যাওয়ার প্রতিরোধে করণীয়

মাড়ির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিন সঠিকভাবে দুবার ব্রাশ ও ফ্লস করা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (যেমন কমলা, লেবু, ব্রোকোলি, পেয়ারা) খাওয়া এবং ধূমপান ও তামাক বর্জন করা জরুরি।

মাড়ি ফুলে গেলে বা ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে করণীয়

দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি। ভিটামিন সি শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা দাঁতের মাড়ি এবং পুরো শরীরের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা দেহের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং টিস্যুর পুনর্গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ির টিস্যু দুর্বল হয়ে যায়, ফলে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, রক্তপাত হয়, এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে।
ভিটামিন সি এর ভূমিকা ও অভাবের প্রভাব

১. কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা: ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ত্বক, হাড়, রক্তনালী, এবং মাড়ির টিস্যুকে মজবুত করে। কোলাজেনের অভাবে মাড়ির টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং মাড়ি ফুলে যায়।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ: ভিটামিন সি দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং মাড়িতে প্রদাহ ও সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে। এর অভাবে মাড়িতে ব্যথা, ফোলাভাব এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

বিস্তারিত দেখুন: ভিডিও

৩. স্কার্ভির ঝুঁকি: ভিটামিন সি এর ঘাটতি স্কার্ভি নামক রোগের জন্য দায়ী, যার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্তপাত, এবং ব্যথা অন্তর্ভুক্ত। এই রোগে মাড়ির টিস্যু এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে দাঁত পর্যন্ত নড়ে যেতে পারে।

ভিটামিন সি এর অভাবের লক্ষণ

ভিটামিন সি এর ঘাটতির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
  • মাড়ির ব্যথা ও ফোলাভাব
  • মাড়ি থেকে রক্তপাত
  • মুখে ঘা
  • মুখে দূর্গন্ধ
  • ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া
  • ক্ষত দ্রুত না শুকানো
ভিটামিন সি এর অভাব পূরণে করণীয়

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে অভাব পূরণ করা সম্ভব। সাধারণ উৎসগুলো হলো:
  • সাইট্রাস ফল: কমলা, লেবু, মাল্টা
  • বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি
  • সবজি: ব্রোকোলি, টমেটো, ক্যাপসিকাম
  • অন্যান্য: পেয়ারা, আমলকী, পেপে
মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অতিরিক্ত করণীয়

ভিটামিন সি এর অভাব পূরণের পাশাপাশি নিয়মিত দাঁতের পরিচর্যা করতে হবে। প্রতিদিন দুবার দাঁত ব্রাশ, ফ্লসিং, এবং মুখ পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। তামাক ও ধূমপান পরিহার করাও মাড়ির সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। মাড়িতে ব্যথা বা রক্তপাত হলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে।

দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে

দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে এর পেছনে সংক্রমণ, প্রদাহ বা ভিটামিনের অভাব থাকতে পারে। এ অবস্থায় ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ওষুধ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। মাড়ি ফুলে গেলে সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, এবং অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিচে এই ওষুধগুলো ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. অ্যান্টিবায়োটিক:ব্যাকটেরিয়া-জনিত সংক্রমণ হলে ডেন্টিস্ট সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন যা মাড়ির প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।

প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক:
  • Amoxicillin: সাধারণ সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত।
  • Metronidazole: মূলত জিনজিভাইটিস ও পিরিয়ডন্টাল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত।
  • Clindamycin: যদি অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর না হয়, তবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ব্যবহার বিধি: ডেন্টিস্টের নির্দেশিত নিয়ম মেনে কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে।
২. ব্যথানাশক ওষুধ:প্রদাহ বা সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ কার্যকর। এটি মাড়ির ফোলাভাব ও ব্যথা হ্রাস করে।
প্রচলিত ব্যথানাশক:
  • Ibuprofen: প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সহায়ক।
  • Paracetamol: সাধারণ ব্যথানাশক।
  • Naproxen: শক্তিশালী প্রদাহনাশক হিসেবে ব্যবহৃত।
  • ব্যবহার বিধি: ব্যথার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেন্টিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী খেতে হবে।
৩. অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ:অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ মাড়ির ফোলাভাব ও মুখের সংক্রমণ কমাতে কার্যকর, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করে।

প্রচলিত অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ:
  • Chlorhexidine: মাড়ির প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
  • Listerine: প্রচলিত অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ।
  • ব্যবহার বিধি: দাঁত ব্রাশের পরে দিনে দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট:মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও প্রদাহ কমাতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • ভিটামিন সি ট্যাবলেট: খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি না পেলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
৫. প্রাকৃতিক উপায়:মাড়ি ফুলে গেলে কিছু প্রাকৃতিক উপায়ও কার্যকর হতে পারে:
  • লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করা: প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • ঠান্ডা বা গরম সেঁক দেওয়া: মাড়িতে সেঁক দিলে ব্যথা কমে।
  • গরম টি ব্যাগ: মাড়িতে রাখলে ব্যথা ও প্রদাহ কমতে পারে।
পরামর্শ ও সতর্কতা

মাড়ির ফোলাভাব কয়েকদিনের মধ্যে কমে না গেলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজে থেকে ওষুধ সেবন না করে বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে চিকিৎসা গ্রহণ করা সর্বদা নিরাপদ।

উপসংহার: দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো ভিটামিন সি এর অভাব। ভিটামিন সি শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ এটি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মাড়ির টিস্যু মজবুত রাখে। ভিটামিন সি এর ঘাটতির ফলে মাড়ি দুর্বল ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, যার কারণে মাড়ি ফুলে যায় এবং রক্তপাত ও প্রদাহ দেখা দেয়। তাছাড়া, ভিটামিন সি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা মুখের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাব দূর করতে সাইট্রাস ফল, বেরি জাতীয় ফল, পেয়ারা, আমলকী, এবং ব্রোকোলির মতো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url