কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ট্যাবলেট এর নাম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যা অনুসরণ করাও সহজ এবং প্রাকৃতিকভাবে কাজ করে। প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। আঁশ হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং মলকে নরম করে, যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। শাকসবজি, ফল (বিশেষ করে পেঁপে, আপেল, এবং নাশপাতি), ওটস, এবং সম্পূর্ণ শস্য খাদ্যতালিকায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে অন্ত্রের মল নরম থাকে এবং সহজে নির্গত হয়। সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি বা এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করাও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

আরও একটি সহজ পদ্ধতি হলো ভেজানো মেথি বা ঈসবগুলের ভুসি খাওয়া। এগুলো প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। রাতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং মল সহজে বের হয়। ঈসবগুলের ভুসিও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে কার্যকর।

পেটের পেশীর সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, হাঁটা এবং যোগব্যায়াম করা দরকার। এগুলো অন্ত্রের চলাচলকে সক্রিয় করে, ফলে মল সহজে নির্গত হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

এছাড়াও ঘরোয়া উপায় হিসেবে কাঁচা আমলকি খাওয়া, মলাশয়ে ম্যাসাজ, এবং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চা-কফি খাওয়া কমানো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক হতে পারে।

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে কিছু সহজ ও প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যা নিরাপদ এবং কার্যকর। যেহেতু ছোটদের হজম প্রক্রিয়া বড়দের মতো শক্তিশালী নয়, তাই নরম ও সহজে হজমযোগ্য খাবার তাদের জন্য উপকারী। এখানে কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় তুলে ধরা হলো:
পানি ও তরল খাবার:বাচ্চাদের শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মলকে নরম করে, যা অন্ত্রের চলাচল সহজ করে। তাদের যথেষ্ট পরিমাণ পানি খেতে উৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, ফলের রস (বিশেষ করে কমলার রস) হজমে সহায়ক, তবে চিনি বা প্রিজারভেটিভযুক্ত জুস এড়ানো উচিত।

আঁশযুক্ত খাবার:খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার যোগ করা খুবই জরুরি, কারণ এটি অন্ত্রের চলাচল সহজ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শাকসবজি, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, কমলালেবু ও ওটসের মতো খাবার তাদের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। খাবার ছোট ছোট টুকরো করে দিলে বাচ্চারা সহজে চিবিয়ে খেতে পারবে।

পাকা পেঁপে ও কাঁচা কলা:পাকা পেঁপে ও কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে কার্যকর। পেঁপেতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের চলাচল বাড়ায়। প্রতিদিন সকালে এক টুকরো পাকা পেঁপে দেওয়া যেতে পারে। কাঁচা কলাও এই সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

খালি পেটে গরম পানি ও ঈসবগুলের ভুসি:সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করানো অন্ত্রের চলাচল সহজ করে। এছাড়া, অল্প পরিমাণ ঈসবগুলের ভুসি খাওয়ানোও সহায়ক হতে পারে, তবে পরিমাণ কম রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ঘি ও দুধ:রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ ঘি গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। এটি অন্ত্রের মলকে নরম করে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ব্যায়াম ও খেলাধুলা:হালকা ব্যায়াম ও খেলাধুলা অন্ত্রের চলাচল সক্রিয় করে। বাচ্চাদের দৌড়ানো, লাফানো ও সক্রিয় থাকতে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে হাঁটা বা লাফানোর অভ্যাস তাদের অন্ত্রের স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করে।

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার:প্রোবায়োটিক হজমকে সহজ করে। দই একটি ভালো প্রোবায়োটিক উৎস, যা প্রতিদিন খাওয়ালে অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায় ও হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার:চিপস, ফাস্ট ফুড, ও কোল্ড ড্রিঙ্কস কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে, তাই এই ধরনের খাবার এড়ানো উচিত। এর পরিবর্তে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং বেশি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ানো উপকারী।

রাতে ভেজানো মেথির পানি:রাতে এক চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ছেঁকে খাওয়ানো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। এটি অন্ত্রের চলাচল স্বাভাবিক করে।

এই ঘরোয়া উপায়গুলো বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছালে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো একটি সাধারণ হজমজনিত সমস্যা, যা সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কম সক্রিয় জীবনযাত্রার কারণে দেখা দেয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল শক্ত হয়ে যায় এবং মলত্যাগে অসুবিধা হয়, যা অস্বস্তিকর এবং কখনো কখনো যন্ত্রণাদায়কও হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ ও প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রয়েছে, যা সহজেই পালন করা যায়। নিচে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান:শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ পানি থাকা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার অন্যতম সহজ উপায়। পানি অন্ত্রের মলকে নরম রাখে, ফলে মলত্যাগ সহজ হয়। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত, এবং সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি পান করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যেতে পারে।

বিস্তারিত দেখুন: ভিডিও

২. আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ:আঁশযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। আঁশ অন্ত্রের মল নরম রাখে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু, ওটস, এবং সম্পূর্ণ শস্যদানা রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হ্রাস পায়। তবে খাবার ছোট ছোট টুকরো করে এবং ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া জরুরি।

৩. প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ:প্রোবায়োটিক অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। দই প্রোবায়োটিকের একটি ভালো উৎস। প্রতিদিন দই খাওয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এছাড়া কেফির ও অন্যান্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারও উপকারী হতে পারে।

৪. ভেজানো মেথি ও ঈসবগুলের ভুসি:মেথি এবং ঈসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। রাতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। ঈসবগুলের ভুসি মল নরম করে এবং সহজে নির্গত করতে সাহায্য করে। তবে এগুলোর পরিমাণ ও ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উত্তম।

৫. প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ ফল: পেঁপে, কাঁচা কলা, এবং আঙুর:পাকা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। এতে প্রচুর ফাইবার ও এনজাইম আছে, যা অন্ত্রের চলাচল বাড়াতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে বা খাবারের পর এক টুকরো পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা কলা ও আঙুরও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক।

৬. ঘি এবং গরম দুধ:ঘি এবং গরম দুধের মিশ্রণ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ ঘি এক গ্লাস গরম দুধে মিশিয়ে খেলে অন্ত্রের চলাচল উন্নত হয় এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।

৭. চিয়া সিড এবং ফ্ল্যাক্স সিড (তিসি):চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিড উভয়ই ফাইবারে ভরপুর। এগুলো মল নরম করে এবং সহজে নির্গত করতে সাহায্য করে। চিয়া সিড ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে। ফ্ল্যাক্স সিডও একইভাবে খাওয়া যায়।

৮. নিয়মিত ব্যায়াম:শরীরচর্চা অন্ত্রের চলাচল সচল রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। যোগব্যায়াম, যেমন 'পবনমুক্তাসন', অন্ত্রের চলাচল উন্নত করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

৯. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো:প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, এবং কোমল পানীয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়াতে পারে। এই ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়ানো উচিত এবং ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রাকৃতিক ফলমূল খাওয়া উচিত।

১০. তেঁতুল এবং আদার পানীয়:তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। তেঁতুল পানি বা তেঁতুলের আচার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। আদা চায়ে মধু মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং পেটের অস্বস্তি কমে।

আরো পড়ুন:সবুজ শাক সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন এবং উপকারিতা

১১. ভেজানো কিশমিশ:রাতে কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি পান ও কিশমিশ খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক। কিশমিশের ফাইবার হজমে সহায়ক এবং এটি মল নরম রাখতে সহায়ক।

সতর্কতা

উল্লিখিত ঘরোয়া উপায়গুলো কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ট্যাবলেট এর নাম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়। তবে এসব ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচে কয়েকটি সাধারণ ওষুধের নাম উল্লেখ করা হলো, যা সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে:

  • ইসবগুলের ভুসি (Psyllium Husk): এটি প্রাকৃতিকভাবে মল নরম করতে সহায়ক।
  • ডুলকোল্যাক্স (Dulcolax): এটি একটি ল্যাক্সেটিভ, যা অন্ত্রের চলাচল বাড়ায়।
  • ল্যাকটুলোজ সিরাপ (Lactulose Syrup): মল নরম করে এবং মলত্যাগ সহজ করতে সাহায্য করে।
  • সেনা ট্যাবলেট (Senna Tablets): এটি একটি হার্বাল ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে।
  • মুভিকল (Movicol): মল নরম করে এবং মলত্যাগে সহায়তা করে।

এ ছাড়াও, মেটামুসিল বা ফাইবারকন্টের মতো ফাইবার সাপ্লিমেন্টও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক হতে পারে।

তবে এই ধরনের ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এতে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তাই ঘরোয়া উপায় ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ করাই উত্তম।

উপসংহার: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ঘরোয়া উপায়গুলি সহজ, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিকভাবে কার্যকর। যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান, আঁশসমৃদ্ধ খাবার, প্রোবায়োটিক, এবং প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করে মল নরম রাখা এবং অন্ত্রের চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানোও এই সমস্যার প্রতিরোধে সহায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদি বা গুরুতর কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ঘরোয়া উপায়গুলির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url