জুমার নামাজ মোট কত রাকাত ও কি কি-জুমার নামাজের ফজিলত

জুমার নামাজ মোট কত রাকাত ও কি কি-জুমার নামাজের ফজিলত

জুমার নামাজের মোট রাকাত হলো ১৪। এর মধ্যে ২ রাকাত ফরজ এবং বাকিগুলো সুন্নত। জুমার দিন খুৎবা শোনা ফরজ, আর খুৎবার পর ২ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয়। ফরজের আগে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং ফরজের পর ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করা হয়। এছাড়া, চাইলে আরও ২ রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়।
জুমার নামাজ মোট কত রাকাত ও কি কি

জুমার নামাজের ফজিলত

জুমার নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন এবং হাদিসে অনেক উল্লেখ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একবার শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করা হয়, যা মুমিনদের জন্য বিশেষ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। নিচে জুমার নামাজের ফজিলত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. আল্লাহর নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুরা জুমুআয় (৬২:৯-১০) জুমার নামাজের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন,

"হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জান।"

এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, জুমার নামাজ আল্লাহর এক বিশেষ নির্দেশনা এবং মুমিনদের ওপর বাধ্যতামূলক।

২. পাপ মোচন

হাদিসে এসেছে যে, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে পাপ ঘটে, তা জুমার নামাজ আদায় করলে মাফ করা হয়। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

"যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমরূপে পরিষ্কার হয়, তাড়াতাড়ি (মসজিদে) যায়, খুতবার সময় মনোযোগ সহকারে শোনে এবং নামাজ আদায় করে, তার এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (সহিহ মুসলিম)

৩. জুমার দিনকে ঈদের সমতুল্য দিন

হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জুমার দিনকে ঈদের দিনের মতো মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

"জুমার দিন হলো মুসলিমদের ঈদ।" (ইবন মাজাহ)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে, জুমার দিনকে আল্লাহ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য এটি এক আনন্দের দিন।

৪. দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ মুহূর্ত

জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি বিশেষ মুহূর্ত থাকে।এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, জুমার দিনে বিশেষ দোয়া কবুলের সময় আছে, যা মুসলিমদের জন্য বিরাট এক সুযোগ।

৫. জান্নাতের সুধা লাভ

জুমার দিনে নামাজ আদায় এবং আল্লাহর স্মরণ করার মাধ্যমে জান্নাতের সুধা লাভ করার সুযোগ রয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে,

"যারা নিয়মিতভাবে জুমার নামাজ আদায় করে, তারা জান্নাতে বিশেষ এক ধরনের সুধা পাবে।" (তিরমিজি)

৬. ফেরেশতাদের সাক্ষী থাকা

জুমার দিনে যখন মুসলিমরা মসজিদে প্রবেশ করে, তখন ফেরেশতারা দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের নাম লিখে রাখে। যারা প্রথমে আসে, তাদের নাম সবার আগে লেখা হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

"যখন জুমার দিন আসে, ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং যারা আগে আসে তাদের নাম আগে লিখে রাখে।" (বুখারি ও মুসলিম)

আরো পড়ুন: নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

৭. জুমার দিনের বিশেষ খুতবা

জুমার দিন খুতবা শোনা ফরজ এবং এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খুতবার সময় মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং আল্লাহর স্মরণ করা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত বরকতময়। এতে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে যায়।

জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম

জুমার নামাজ আদায়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। এটি অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের চেয়ে একটু ভিন্ন, কারণ এতে খুতবার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জুমার নামাজের নিয়মগুলো নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

জুমার দিন বিশেষ গোসল করা সুন্নত। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

"যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তমরূপে পরিষ্কার হয়, তাড়াতাড়ি (মসজিদে) যায়, খুতবার সময় মনোযোগ সহকারে শোনে এবং নামাজ আদায় করে, তার এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" (সহিহ মুসলিম)

২. সুগন্ধি ব্যবহার করা

সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করা সুন্নত। এটি মসজিদে যাওয়ার আদবের মধ্যে পড়ে।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজের জন্য যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি জুমার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে আসে, সে গরু কুরবানি করার সওয়াব পায়। যিনি দ্বিতীয় সময়ে আসে, সে উট কুরবানি করার সওয়াব পায়। যিনি তৃতীয় সময়ে আসে, সে মেষ কুরবানি করার সওয়াব পায়। এবং যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে আসে, সে ডিম কুরবানি করার সওয়াব পায়।" (সহিহ বুখারি)

৪. মসজিদে প্রবেশের পর সুন্নত নামাজ আদায় করা

মসজিদে প্রবেশ করে দুই বা চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজটি জুমার ফরজের পূর্বে সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

৫. খুতবা শোনা

জুমার দিন খুতবা শোনা ফরজ। ইমাম মিম্বরে উঠে খুতবা দেওয়ার সময় নীরব থাকা এবং মনোযোগ দিয়ে শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুতবা শোনার সময় কোনো কথা বলা বা অন্য কিছু করা উচিত নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

"যখন খুতবা চলতে থাকে, তখন মনোযোগ সহকারে শুনো এবং নীরব থাকো।" (সূরা জুমুআ, আয়াত ৯)

৬. দুই রাকাত ফরজ নামাজ

খুতবা শেষ হওয়ার পর ইমামের পেছনে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। এটি জুমার মূল ফরজ নামাজ। নামাজের নিয়ম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতোই, ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ফরজ নামাজ পড়া হয়।

৭. ফরজের পর সুন্নত নামাজ

ফরজের পর ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করা হয়। এটি ফরজের পরের সুন্নত নামাজ। কেউ চাইলে এরপরে আরও ২ রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন, যা সুন্নত নয় তবে নফল।

৮. দোয়া ও ইস্তেগফার

নামাজ শেষে দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। জুমার দিন বিশেষ দোয়া কবুলের সময় থাকে, তাই এ সময়ে দোয়া করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

জুমার নামাজ মোট কত রাকাত কি কি

জুমার নামাজের মোট রাকাত হলো ১৪। এর মধ্যে:
  • ফরজ নামাজ: ২ রাকাত

সুন্নত মুয়াক্কাদা:
  • ফরজের আগে ৪ রাকাত
  • ফরজের পরে ৪ রাকাত
এছাড়া, কেউ চাইলে অতিরিক্ত ২ রাকাত নফল নামাজও পড়তে পারেন, যা সুন্নত নয় তবে অনুমোদিত।

সংক্ষেপে:
  • ফরজ: ২ রাকাত
  • সুন্নত (ফরজের আগে): ৪ রাকাত
  • সুন্নত (ফরজের পরে): ৪ রাকাত
  • নফল (ঐচ্ছিক): ২ রাকাত
এভাবে মোট ১৪ রাকাত নামাজ পড়া হয়, যদিও নফল নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক নয়।

মহিলাদের জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম

মহিলাদের জন্য জুমার নামাজের নিয়ম সাধারণত পুরুষদের জন্য নির্ধারিত নিয়মের সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একই, তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখানে মহিলাদের জন্য জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:

১. জুমার নামাজের ফরজীয়াত:মহিলাদের জন্য ফরজ: মহিলাদের জন্য জুমার নামাজ মসজিদে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তারা ঘরেও যোহরের নামাজ পড়তে পারেন। তবে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

২. মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি:
  • গোসল: মহিলাদের জন্য জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। গোসল করলে তা অধিক ফজিলতপূর্ণ হবে।
  • সুগন্ধি ব্যবহার: সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা সুন্নত।
৩. মসজিদে প্রবেশ এবং নামাজ:
  • মসজিদে প্রবেশ: মহিলারা যখন মসজিদে যাবেন, তখন সেখানে বিশেষভাবে নির্ধারিত মহিলাদের প্রার্থনার স্থানে গিয়ে বসবেন।
  • খুতবা শোনা: মহিলাদের জন্যও খুতবা শোনা সুন্নত। তবে নামাজের সময় অন্যান্য মহিলাদের মতোই খুতবা শুনতে হবে এবং আল্লাহর স্মরণ করতে হবে।
৪. নামাজের রাকাত:
  • ফরজ নামাজ: মহিলারা ২ রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করবেন, ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে।
  • সুন্নত নামাজ: ফরজের আগে ৪ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে হবে, যদি সময় ও স্থান অনুমতি দেয়। ফরজের পরে ৪ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করা যেতে পারে, তবে মহিলাদের জন্য এটি বাড়ির পরিবেশে আদায় করা বেশি স্বাভাবিক।
৫. দোয়া ও ইস্তেগফার:
  • দোয়া: নামাজ শেষে দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনে বিশেষ দোয়া কবুলের সময় থাকে, তাই মহিলাদেরও দোয়া করতে হবে।
৬. আবদীর পর:
  • নামাজের পর: ফরজ নামাজ শেষে মহিলারা বাড়িতে ফিরে আসার পরে অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়তে পারেন যদি তারা চান।
সার্বিকভাবে, মহিলাদের জন্য জুমার নামাজের নিয়ম পুরুষদের জন্য নির্ধারিত নিয়মের সাথে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে মহিলারা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে তাদের প্রার্থনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

উপসংহার: জুমার নামাজের নিয়মগুলো হলো: প্রথমে গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা, তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া, খুতবা শোনা এবং তারপর দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা। ফরজের পর সুন্নত ও নফল নামাজ পড়া উচিত। জুমার নামাজের প্রতিটি ধাপে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছা এবং মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করলে এর ফজিলত অত্যন্ত বেশি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url