রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, কারণ হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহনের জন্য দায়ী। এর ফলে শারীরিক দুর্বলতা, অবসন্নতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা হাত-পা, বুকে ব্যথা এবং হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে কমে যাওয়ার কারণ কি

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার (অ্যানিমিয়া) অনেক কারণ রয়েছে, যা শারীরিক সমস্যা এবং বিভিন্ন জীবনযাত্রার অভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। হিমোগ্লোবিন হল রক্তের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) একটি প্রোটিন, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে তা অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় এবং শারীরিক দুর্বলতার সৃষ্টি করে। নিচে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো:

১. আয়রনের অভাব: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ আয়রনের ঘাটতি। আয়রন হল হিমোগ্লোবিনের প্রধান উপাদান, যা অক্সিজেনকে বাঁধতে এবং পরিবহন করতে সাহায্য করে। আয়রনের অভাবে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না, ফলে রক্তাল্পতা বা আয়রন-ঘাটতি অ্যানিমিয়া হয়।

২. ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাব: ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উপাদানগুলির অভাব হলে লোহিত রক্তকণিকা সঠিকভাবে তৈরি হয় না, ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় এবং অ্যানিমিয়া হয়। যারা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড বা ভিটামিন বি১২ গ্রহণ করেন না, তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

৩. রক্তক্ষরণ: শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এই রক্তপাত হতে পারে মাসিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটের আলসার, কিডনি বা যকৃতের রোগ, পাইলস, বা অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে।

৪. অন্তর্নিহিত রোগ: কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার, ক্রনিক ইনফেকশন বা অটোইমিউন ডিজিজ, রক্তের হিমোগ্লোবিন কমিয়ে দিতে পারে। এসব রোগ শরীরের রক্ত তৈরি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস পায়।

আরো পড়ুন: কি ফল খেলে রক্ত বাড়ে বিস্তারিত জানান

৫. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং আঘাত: অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে শরীর বেশি অক্সিজেন ব্যবহার করে, ফলে হিমোগ্লোবিনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। আবার শরীরে আঘাত লোহিত রক্তকণিকার ক্ষতি করে, যা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি তৈরি করতে পারে।

৬. জেনেটিক সমস্যা: কিছু বংশগত রোগ, যেমন থ্যালাসেমিয়া এবং সিকল সেল অ্যানিমিয়া, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। এসব রোগের ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের গঠন বা কার্যকারিতা বিঘ্নিত হয়।

৭. গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী নারীদের মধ্যে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায়। যদি তারা পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ না করেন, তাহলে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

৮. অ্যালকোহল এবং মাদক সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং কিছু মাদক শরীরের রক্ত তৈরি প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায় এবং হিমোগ্লোবিন কমিয়ে দিতে পারে।

৯. খাদ্যাভ্যাসে অপূর্ণতা: যেসব ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে না, তাদের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের অভাব হতে পারে।

১০. দেহে সংক্রমণ: কিছু সংক্রমণ যেমন ম্যালেরিয়া, যক্ষা, বা এইচআইভি/এইডস রক্তকণিকা ধ্বংস করে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

উপরোক্ত কারণগুলির জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি তৈরি হতে পারে, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে কমে যাওয়ার লক্ষণ

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ বা উপসর্গগুলো শরীরে অক্সিজেনের অভাবে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। নিচে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. অত্যাধিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, ফলে পেশিগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর কারণে মানুষ খুব সহজেই ক্লান্ত বোধ করে এবং দৈনন্দিন কাজ করতে অসুবিধা হয়। একটুখানি কাজ করলেই অবসন্ন অনুভূতি হয়।

২. শ্বাসকষ্ট:হিমোগ্লোবিনের অভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মানুষ সামান্য পরিশ্রমে বা হাঁটাহাঁটি করলেও শ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ করে। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের সময় শ্বাসকষ্ট বেশি দেখা যায়।

৩. মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথা:মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে মাথা ঘোরা বা ভারী লাগতে পারে। অনেক সময় মাথাব্যথা দেখা দেয়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়। হিমোগ্লোবিনের অভাবে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে এমনটা ঘটে।

৪. বুকে ব্যথা:হিমোগ্লোবিন কমে গেলে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে, ফলে বুকে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা বিশেষত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় তীব্র হতে পারে, কারণ তখন হৃৎপিণ্ড বেশি অক্সিজেন চায়।

৫. হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি রক্ত পাম্প করতে চেষ্টা করে, ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করা বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন অনুভূত হয়।

৬. ত্বক, নখ এবং ঠোঁট ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া:রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে ত্বকে রক্তের রং স্বাভাবিক থাকে না, ফলে ত্বক ফ্যাকাশে বা বিবর্ণ দেখায়। বিশেষ করে নখ এবং ঠোঁট ফ্যাকাশে হয়ে যায়, যা সহজেই দৃশ্যমান হতে পারে। অনেক সময় মুখের ভেতরের অংশও ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

৭. ঠান্ডা হাত-পা:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীরের দূরবর্তী অংশে (যেমন হাত এবং পা) রক্তের প্রবাহ কমে যায়, যার ফলে হাত ও পায়ে ঠান্ডাভাব অনুভূত হয়। এটি শরীরের অঙ্গগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে ঘটে।

৮. মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দুর্বলতা:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে মাংসপেশিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, যার ফলে পেশির শক্তি কমে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষত বেশি পরিশ্রমের পর পেশির ব্যথা এবং ক্লান্তি বেশি লক্ষ করা যায়।

৯. মনোযোগের অভাব এবং স্মৃতিভ্রংশ:হিমোগ্লোবিনের অভাবে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গেলে মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সহজ জিনিস ভুলে যাওয়া বা মস্তিষ্কে ধীর গতির কাজ করতে দেখা যায়।

১০. ঘুমের অসুবিধা:অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে অনেক সময় সঠিকভাবে ঘুম আসে না। কিছু মানুষ অস্বস্তি বোধ করে বা ঘুমানোর সময় শ্বাসকষ্টের কারণে ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যায়।

১১. চোখের নিচে ফোলাভাব এবং ক্লান্তি:অনেক সময় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে চোখের নিচে ফোলা ভাব এবং গাঢ় কালো দাগ দেখা যায়, যা ক্লান্তির অন্যতম লক্ষণ। এ ধরনের লক্ষণগুলো সাধারণত হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের অভাবে দেখা দেয়।

১২. খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া:হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে অনেক সময় খাওয়ার রুচি কমে যায়। এছাড়াও, কিছু মানুষ অস্বাভাবিকভাবে মাটি, মাটি জাতীয় বস্তু বা বরফ খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে, যা ‘পিকা’ নামে পরিচিত।

১৩. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা:হিমোগ্লোবিনের অভাবে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, যার ফলে শরীর বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা অনুভব করতে পারে। এ ধরনের অবস্থায় সহজেই জ্বর বা শীতকাতরতা দেখা দেয়।

এই উপসর্গগুলো শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার পরিমাণ এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে বিভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে। যদি এ ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে (অ্যানিমিয়া) শরীরে অক্সিজেন পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। হিমোগ্লোবিনের মূল কাজ হল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা। এর অভাব হলে শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যেসব সমস্যা হয় তা নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. দুর্বলতা ও অবসন্নতা:রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এর ফলে পেশিগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যা শারীরিক দুর্বলতা এবং অবসন্নতার কারণ হয়। অল্প কাজ করলেই সহজেই ক্লান্তি অনুভূত হয়।

২. শ্বাসকষ্ট:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। শারীরিক পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে।

৩. হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া:শরীর যখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, তখন হৃদযন্ত্র দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করে। এর ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করা বা হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক গতিবেগ দেখা যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. বুকে ব্যথা:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে হৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, যা বুকে ব্যথার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শারীরিক পরিশ্রমের সময় এই ব্যথা তীব্র হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অক্সিজেন ঘাটতি হৃদরোগ বা এনজাইনার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৫. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস:মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হলে মনোযোগের অভাব, ধীর প্রতিক্রিয়া এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এর ফলে কাজের গতি কমে যায় এবং জটিল মানসিক কাজ করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, এবং ভারী লাগা অনুভূত হয়।

৬. ত্বক ফ্যাকাশে বা হলদেটে হওয়া:রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে ত্বকের রং ফ্যাকাশে বা হলদেটে হয়ে যায়। বিশেষ করে ঠোঁট, নখ এবং চোখের নিচের অংশ ফ্যাকাশে দেখাতে পারে। এটি হিমোগ্লোবিনের অভাবজনিত লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম।

৭. ঠান্ডা হাত-পা:রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে শরীরের দূরবর্তী অংশে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যার ফলে হাত ও পায়ে ঠান্ডাভাব অনুভূত হয়। এটি রক্ত প্রবাহে ঘাটতির কারণে ঘটে।

৮. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়া:হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে সংক্রমণ, ঠান্ডা বা ফ্লুয়ের মতো রোগ সহজেই আক্রমণ করতে পারে। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে বিভিন্ন অসুস্থতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

৯. অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস:যেহেতু হিমোগ্লোবিনের কাজ হল শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা, এর ঘাটতি হলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদী হিমোগ্লোবিনের অভাবের কারণে কিডনি, যকৃত, মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, যা জীবনধারণের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

১০. গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বৃদ্ধি:গর্ভবতী নারীদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে প্রি-ম্যাচিউর বার্থ, লো বার্থ ওয়েট বা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

১১. মনোযোগের অভাব ও মেজাজ পরিবর্তন:হিমোগ্লোবিনের অভাবের কারণে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ না করলে মানুষ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এর ফলে মানসিক অস্থিরতা, মেজাজের পরিবর্তন এবং হতাশা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপের সঙ্গে এ ধরনের শারীরিক লক্ষণগুলো যুক্ত হতে পারে।

১২. পেশি ও হাড়ের দুর্বলতা:অক্সিজেনের অভাবে পেশি ও হাড়ের কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে পেশিতে ব্যথা, দুর্বলতা এবং হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে এই ধরনের ব্যথা ও দুর্বলতা তীব্র হয়।

১৩. হজমের সমস্যা:হিমোগ্লোবিন কমে গেলে পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে। যাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যায়, তাদের ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

১৪. শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে বাধা:শিশুদের মধ্যে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে শারীরিক বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায় এবং মানসিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। দীর্ঘমেয়াদী হিমোগ্লোবিনের অভাব শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে দেখা দেয়া এই সমস্যাগুলো দ্রুত সনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার: রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, যার ফলে হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, এবং স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী নারীদের এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না করলে হিমোগ্লোবিনের অভাব জীবনকে বিপন্ন করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আলজেবা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url